বাংলাদেশে কীভাবে আমদানি রপ্তানি ব্যবসা শুরু করবেন ?

আপনি কি জানতে চান আমদানি রপ্তানি ব্যবসা কিভাবে করতে হয় ? আমদানি রপ্তানি ব্যবসা ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে। চাহিদা বেড়েই চলছে।

কেননা কোন দেশ যখন উন্নতি হয় তখন আমদানি রপ্তানি ব্যবসা তখন বেশি বিস্তার লাভ করতে থাকে। যেহেতু আমাদের দেশ উন্নতি লাভ করছে এ হিসেবে আমদানি রপ্তানি ব্যবসা এর চাহিদা বেড়ে গিয়েছে।

আরো স্পষ্ট ভাবে বলতে পারি আমরা যখন কোন একটি দেশ শিল্পের দিক দিয়ে এগিয়ে যায় তখন সেই দেশে রপ্তানির চাহিদা বেড়ে যায়।

আমদানি রপ্তানি ব্যবসা

আর যখন কোন দেশের মানুষরা বেশি বেশি ক্রয় করতে থাকে। অর্থাৎ তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়তে থাকে তখন সেই দেশের আমদানির চাহিদা বাড়তে থাকে। এই হিসেবে আমাদের দেশে উভয়টাই পাওয়া যাচ্ছে। কেননা আমাদের দেশ উন্নতির পথে হাঁটছে।

অতএব আমদানি রপ্তানির  অনেক চাহিদা রয়েছে। তাই আজ আমি আমদানি রপ্তানি ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তথ্য দিব। এবং নানা রকম কৌশল বর্ণনা করবো। যাতে করে আপনি খুব সহজেই সফলতা অর্জন করতে পারেন।

Table of Contents :-

আমদানি রপ্তানি ব্যবসা আইডিয়া ২০২৫

আপনি যদি আমদানি রপ্তানি ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই আমদানি ব্যবসা সম্পর্কে জানতে হবে। তাই আগে আমি এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তথ্য দিব।

আমদানি রপ্তানি ব্যবসা কি ?

এটা মূলত আন্তর্জাতিক ব্যবসা। অর্থাৎ এক দেশ থেকে পণ্য কিনে অন্য দেশে বিক্রি করা। যেমন : বাংলাদেশের কোন পণ্য বিদেশে বিক্রি করা। এটাকে বলা হয় রপ্তানি।

আর বিদেশের কোন পণ্য বাংলাদেশে এনে বিক্রি করা এটাকে বলা হয় আমদানি। আশা করি আপনাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

 কি কি পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা হয় ?

যেসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা হয়

কয়েকটি চাহিদাপূর্ণ পণ্যের তালিকা দেয়া হলো :

  • চামড়া
  • পোশাক
  • পাট
  • ঔষধ
  • হস্তশিল্প

এসমস্ত পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা হয়। আরো অন্যান্য পণ্য রয়েছে। তবে এ সমস্ত পণ্য বেশি রপ্তানি করা হয়।

 কি কি পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করা হয় ?

বাংলাদেশে যে সমস্ত পণ্য আমদানি করা হয়

  • গাড়ি
  • টেলিভিশন
  • মোবাইল
  • কম্পিউটার
  • ইলেকট্রিক জাতীয় নানান সামগ্রী
  • শিল্প কারখানার জন্য কাঁচামাল
  • যন্ত্রপাতি
  • ঔষধ
  • খনিজ তেল
  • পানীয় দ্রব্য
  • ভোজ্য তেল
  • খাদ্যশস্য

ইত্যাদি আরও নানান পণ্য আমাদের বাংলাদেশে আমদানি করা হয়।

বাংলাদেশে কীভাবে একটি আমদানি রপ্তানি ব্যবসা শুরু করবেন ?

১. সর্বপ্রথম বাজার গবেষণা এবং পণ্যের চাহিদা নির্ধারণ করুন :

  • বাজার চাহিদা যাচাই-বাচাই করুন: কোন পণ্যগুলো আমদানি বা রপ্তানির জন্য লাভজনক হতে পারে তা গবেষণা করুন।
  • বাজার নির্ধারণ করুন: কোন দেশ বা অঞ্চলে পণ্যের চাহিদা বেশি, সেটি খুঁজে বের করুন।
  • প্রতিযোগিতা যাচাই-বাচাই করুন: অন্যান্য ব্যবসায়ীরা কীভাবে কাজ করছে এবং তারা কোন দামে পণ্য বিক্রি করছে তা জানুন।

২. ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করুন:

  • পণ্যের ধরন নির্ধারণ করুন: আপনি আমদানি বা রপ্তানির জন্য কোন পণ্য নিয়ে কাজ করবেন তা সিদ্ধান্ত নিন।
  • সংগ্রহ ও পরিবহন নিয়ে পরিকল্পনা করুন: পণ্য কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন এবং কীভাবে তা পরিবহন করবেন।
  • বাজেট এবং বিনিয়োগ নিয়ে পরিকল্পনা করুন: শুরুতে কত টাকা প্রয়োজন হবে এবং কোথা থেকে তহবিল আসবে তা নির্ধারণ করুন।

৩.আমদানি রপ্তানি ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স সংগ্রহ করুন :

যখন পণ্য নির্ণয় করা হয়ে যাবে তখন আপনাকে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। ইচ্ছে করলে আপনি আমদানি ও রপ্তানির জন্য লাইসেন্স করতে পারেন।

আবার ইচ্ছে করলে যে কোন একটি জন্য লাইসেন্স করতে পারেন। লাইসেন্স করার জন্য অবশ্যই আপনাকে আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে নিবন্ধন করতে হবে।

আর লাইসেন্সের জন্য আপনাকে মোটামুটি তিন হাজার টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করতে হবে।

পাশাপাশি আপনার আরো কিছু ডকুমেন্ট লাগবে।

  • টিন সার্টিফিকেট। অর্থাৎ ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN): কর পরিষ্কার রাখতে এটি বাধ্যতামূলক।
  • ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি।
  • ব্যাংক প্রত্যায়ন পত্র
  • ইত্যাদি আরও কয়েকটি বিষয়।

IRC এবং ERC লাইসেন্স:

  • IRC (Import Registration Certificate): আমদানি ব্যবসার জন্য প্রয়োজন।
  • ERC (Export Registration Certificate): রপ্তানি ব্যবসার জন্য প্রয়োজন।

বাণিজ্যিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলুন: L/C (Letter of Credit) সুবিধা ব্যবহার করতে।

৪. সরবরাহকারী এবং ক্রেতা খুজে বের করুন :

  • সরবরাহকারী খোজ করুন: চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, অথবা অন্য যে দেশ থেকে আপনি যদি পণ্য আমদানি করতে চান সেখানে উপযুক্ত সরবরাহকারী খুঁজুন।
  • ক্রেতা খুজুন: বিদেশে পণ্য রপ্তানি করার জন্য বিশ্বস্ত ক্রেতা বা কোম্পানি খুঁজুন। B2B প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন: Alibaba, IndiaMART, এবং Global Sources-এর মতো ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন।

৫. পরিবহন এবং শিপিং কোম্পানি নির্বাচন করুন :

  • শিপিং কোম্পানি নির্বাচন করুন: পণ্য আমদানি বা রপ্তানির জন্য বিশ্বস্ত লজিস্টিক কোম্পানির সাথে চুক্তি করুন।
  • ইনকোটার্মস (Incoterms) বুঝুন: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য শর্তাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন।
  • কাস্টমস প্রক্রিয়া বুঝুন: পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য কীভাবে কাস্টমস ডিউটি ​​পরিশোধ করবেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেবেন তা জানুন।

৬. পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করুন এবং প্যাকেজিং এর দিকে খেয়াল রাখুন :

  • পণ্যের মান নিশ্চিত করুন: আন্তর্জাতিক বাজারের মানদণ্ড অনুযায়ী পণ্য তৈরি বা নির্বাচন করুন।
  • প্যাকেজিং এবং লেবেলিং: পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন এবং গন্তব্য দেশের নিয়ম অনুযায়ী লেবেল দিন।

৭. সবসময় আপডেট থাকুন :

  • ক্রেতা এবং সরবরাহকারীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।
  • নতুন বাজার এবং পণ্যের চাহিদা সম্পর্কে আপডেট থাকুন।
  • সেবার মান বৃদ্ধি করে ক্রেতার সন্তুষ্টি নিশ্চিত করুন।

৮. পেমেন্ট এবং লেনদেন সঠিকভাবে করুন :

  • সুরক্ষিত পেমেন্ট পদ্ধতি নির্বাচন করুন: আন্তর্জাতিক পেমেন্টের জন্য PayPal, Wise, বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মতো মাধ্যম ব্যবহার করুন।
  • L/C ব্যবহার করুন: এটি একটি নিরাপদ পদ্ধতি যা ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের জন্য নির্ভরযোগ্য।

রপ্তানিকারক কি কি সুবিধা পান ?

রপ্তানিকারক যে সমস্ত সুবিধা পেয়ে থাকেন

  • পণ্যসমূহকে বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে রাসকৃত হারে কন্টেইনার এবং বিমান ভাড়া সহ নানান সুবিধা দেওয়া হয়।
  • সরকারকে কোন ধরনের ট্যাক্স দিতে হয় না।
  • রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোতে টিআইছি শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যেখানে রপ্তানি সম্পর্কে নানান বিষয়ে জানতে পারবে।
  • রপ্তানিকারকরা আন্তর্জাতিক মালায় অংশগ্রহণ করার জন্য নানান সুবিধা পেয়ে থাকে।

আরো নানান সুবিধা রয়েছে রপ্তানির ক্ষেত্রে।

আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

  • পরিপূর্ণ ধারণা নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে হবে। অন্যথায় সফল হওয়া যাবেনা।
  • কোন ধরনের পণ্য নিয়ে ব্যবসা করবেন তা ভালোভাবে নির্ণয় করতে হবে।
  • অবশ্যই ব্যাংকের হিসাব খুলতে হবে। কারণ এখানে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হবে বেশি।
  • যে দেশে সাথে আপনি ব্যবসা করতে যাচ্ছেন অবশ্যই সে দেশের ভাষা ভালোভাবে জানতে হবে। তবে আপনি যদি ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হন তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না।
  • তাই অবশ্যই আপনাকে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
  • সবার সাথে যোগাযোগের দক্ষতা থাকতে হবে। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সবার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকতে হবে। তাহলে খুব সহজেই সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

এই সমস্ত বিষয়গুলো ফলো করার আশা করি আপনি খুব সহজেই এই ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

পরিশেষে বলবো : উপরে আমদানি রপ্তানি ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো। আশা করি আপনি এর সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পেয়েছেন। যদি এই লেখাটি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার ১৬টি আইডিয়া 

I always like to learn and spread new things. So my main aim is to bring up new topics related to all types of business ideas.

Leave a Comment