আপনি কি ফলের ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে এ আর্টিকেলটা আপনার জন্য।
খাবারের প্রতি মানুষের টান একটু বেশিই হয়ে থাকে। আর সচেতন জনগণ সুস্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে বেশি পছন্দ করেন।
সে হিসেবে ফল একটি অন্যতম পুষ্টিকর খাদ্য। বর্তমান আমাদের দেশে ফলের চাহিদা অনেক বেশি।
সুস্থ বা অসুস্থ সব ধরনের মানুষই ফল খেতে চায়। কারণ, ফল যেমনভাবে শরীরের জন্য পুষ্টি জোগায়। ঠিক তেমনিভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
সুতরাং আপনি যদি বেকারত্বের এই সময়ে অল্প পুঁজির কোন ব্যবসা করতে চান। তাহলে আপনি ফলের ব্যবসাকে বেছে নিতে পারেন।
একটা কথা মনে রাখবেন, কোন কাজই ছোট নয়। আপনি ভাবতে পারেন, যে আমি যদি ফলের ব্যবসা করি তাহলে সমাজের মানুষ আমাকে ছোট ভাবতে পারে।
কিন্তু আসল সত্য হলো, সমাজের মানুষ কখনো অন্যের ভালো চায় না। আপনি দু-বেলা না খেয়ে থাকলে সামাজের কেউ আপনাকে দেখতে আসবে না।
কেউ আপনার পাশে দাঁড়াবে না। তারা দেখবে আপনার অর্থ সম্পাদ আছে কিনা। তারা দেখবে আপনার ক্ষমতা আছে কিনা।
তাহলে আপনি এই স্বার্থপর সমাজের কথা ভেবে কেন নিজের জীবনকে প্রতিষ্ঠা করার থেকে পিছিয়ে থাকবেন।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, আপনি অল্প পুঁজির এই ফলের ব্যবসা করেও আপনার পরিবারের মুখে হাঁসি ফুটাতে পারবেন।
তাই আজ আমি আপনাদের সুবিধার্থে ফলের ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
পাশাপাশি ব্যবসা করার জন্য কোন কোন বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে সে বিষয়গুলো আলোচনা করব।
যাতে করে আপনি খুব সহজেই ব্যবসা করতে পারেন। অতএব আপনাকে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়তে হবে।
ফলের ব্যবসার আইডিয়া ২০২৪
ফলের ব্যবসা করে সফলতা অর্জনের জন্য আমি আপনাকে কিছু গাইডলাইন দিবো। সুতরাং ব্যবসায় লাভবান হওয়ার জন্য এই গাইডলাইনগুলো অনুসরণ করতে হবে।
ফলের ব্যবসা করতে হলে যেসব বিষয়ে জানা প্রয়োজন।
- পূর্ব পরিকল্পনা
- মূলধন
- ফলের ব্যবসার প্রকারভেদ
- জায়গা নির্বাচন করা
- দক্ষতা
- সঠিক পণ্য নির্বাচন করা
- সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা
- ফল প্যাকেজিং করা
- প্রতিযোগিতা মুলক মনোভাব
- কাস্টমারদের সাথে সদাচরণ করা
এতক্ষণ সংক্ষিপ্ত আলোচনা করলাম । এখন ফলের ব্যবসার আইডিয়া বিস্তারিত আলোচনা করব ।
১, পূর্ব পরিকল্পনা
যে কোন ব্যবসার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। পরিকল্পনা মুলুক যে কোন ব্যবসার ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলে তার সফলতা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
কারণ, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে ভুলের সম্ভাবনা কম থাকে। এজন্য আপনাকে ও ফলের ব্যবসা করতে হলে পূর্ব পরিকল্পনা করতে হবে।
আপনি কিভাবে কোথায় ব্যবসা করবেন। সে সব বিষয়গুলো আপনাকে পূর্ব থেকেই মাথায় রাখতে হবে। পূর্ব পরিকল্পনা দ্বারা দক্ষতা অর্জন হয়।
২, মূলধন
ফলের ব্যবসা করতে হলে আপনাকে মূলধন নিয়ে বেশি ভাবনার প্রয়োজন নেই। অল্প পুঁজি দিয়ে আপনি শুরু করতে পারেন ফলের ব্যবসা ।
তবে, যদি আপনি ফলের ব্যবসা বড় আকারে করতে চান। তাহলে আপনার বড় ধরনের এমাউন্ট লাগবে।
এক্ষেত্রে যদি আপনি বড় আকারে ফলের ব্যবসা করতে চান ,আর আপনার কাছে টাকা না থাকে তাহলে আপনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিজনেস লোন নিতে পারবেন।
মনে রাখতে হবে, আপনার মূলধন অনুযায়ী আপনার ব্যবসার লাভ আসবে।
৩, ফলের ব্যবসার প্রকারভেদ
বর্তমান বাজারে মানুষ বিভিন্নভাবে ফলের ব্যবসা করে থাকে। এবং প্রত্যেক প্রকার ব্যবসার চাহিদা ও বর্তমান সময়ে অনেক চাহিদা রয়েছে।
আমি আপনাদের সুবিধার্থে নিচে ফলের ব্যবসার প্রকারভেদ বিস্তারিতভাবে আপনাদের কে আইডিয়া দিবো।
সুতরাং আপনি ফলের ব্যবসার ক্ষেত্রে যে কোন একটা ব্যবসা বেছে নিতে পারেন।
- (ক) পাইকারি ফল ব্যবসা
- (খ) খুচরা ফল ব্যবসা
- (গ) ভ্যানে করে ফল ব্যবসা
- (ঘ) অনলাইনে ফল ব্যবসা
- (ঙ) সিজনাল ফলের ব্যবসা
(ক) পাইকারি ফল ব্যবসা
আমাদের দেশে অনেক জেলা আছে যেগুলো বিভিন্ন ফল উৎপাদনের দিক দিয়ে বিখ্যাত । যেমন- রাজশাহীতে আম, লিচু ইত্যাদি।
বরিশালে পেয়ারা,আমড়া ইত্যাদি। টাঙ্গাইলের আনারস ইত্যাদি। আপনি পাইকারি ফলের ব্যবসা করতে চাইলে , আপনাকে ঐ সব জেলা থেকে সরাসরি পাইকারি দরে ফল আনতে হবে।
তারপর শহরের বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হবে। এ ধরনের ব্যবসায় যদিও কষ্ট একটু বেশি।তবে এভাবে ফলের ব্যবসা করলে লাভের পরিমাণ ও অনেক বেশি হয়।
আর পাইকারি ফলের ব্যবসা করতে হলে অনেক মুলধনের প্রয়োজন হয়।
(খ) খুচরা ফল ব্যবসা
আপনার যদি পুঁজি কম থাকে। তাহলে আপনি খুচরা ফল ব্যবসা শুরু করতে পারেন। বর্তমান বাজারে খুচরা ফল ব্যবসার চাহিদা ও অনেক বেশি রয়েছে।
এক্ষেত্রে আপনি পাইকারি ফল ব্যবসায়ীদের সাথে চুক্তি করে পাইকারি দরে ফল ক্রয় করলে খুচরা ফল ব্যবসা করেও লাভবান হতে পারবেন।
(গ) ভ্যানে করে ফল ব্যবসা
বর্তমান শহরের মানুষ ব্যস্ততার সাথে সময় অতিবাহিত করে। ঠিক মতো বাজার-ঘাটে যাওয়ার জন্য সময় বের করতে পারে না।
এজন্য অফিসে যাওয়া অথবা আসার পথে ভ্যান থেকে কেনাকাটা শেষ করে । সুতরাং বর্তমানে এই ভ্যানে করে ফল ব্যবসার চাহিদা খুবই বেশি।
আর ভ্যানে করে ফল ব্যবসা করলে আপনার দোকান ভাড়াও দেওয়া লাগবে না। সব মিলিয়ে ভ্যানে করে ফল ব্যবসা করলেও দ্রুত লাভবান হওয়া যায়।
(ঘ) অনলাইনে ফল ব্যবসা
বর্তমান সময়টা অনলাইন ভিত্তিক গড়ে উঠেছে। এখন মানুষ সব কিছুই অনলাইনে করে থাকে।
এজন্য তারা কেনাকাটার জন্য অনলাইন কে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সুতরাং আপনি অনলাইনে ও ফল ব্যবসা করতে পারেন।
(ঙ) সিজনাল ফলের ব্যবসা
বর্তমান সময়ে সিজনাল ফলের ব্যবসা করে অনেকে অনেক লাভবান হয়েছেন। সিজনাল ব্যবসা বলতে, প্রত্যেক সিজনে ঐ সিজনের ফল বিক্রি করা বুঝায়।
সিজনাল ফলের ব্যবসায় লাভের পরিমাণটাও অনেক বেশি হয়। কারণ, স্বাভাবিকভাবে সিজনে ফলের দামটাও বেশি থাকে।
এজন্য আপনি সিজনাল ফলের ব্যবসা করে দ্রুত সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
৪, জায়গা নির্বাচন করা
ব্যবসায় লাভবান হতে হলে আপনাকে ভেবে চিন্তে জায়গা নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি দোকান ভাড়া নিয়ে ফলের ব্যবসা করেন ।
তাহলে আপনাকে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। যেখানে মানুষের আনাগোনা বেশি হয়। যেখানে সাধারণভাবে মানুষের চলাচল বেশি হয়ে থাকে।
আবার আপনি যদি ভ্যানে করে ফলের ব্যবসা করেন , তাহলে আপনি বিভিন্ন মসজিদের সামনে ভ্যান নিয়ে বসতে পারেন।
এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে বহতে পারেন। এবং বিভিন্ন পার্কের সামনে বসতে পারেন। এবং অফিস, আদালতের সামনে বসতে পারেন।
এবং বিভিন্ন বাস স্টেশন অথবা রেল স্টেশনে বসতে পারেন। এবং বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে বসতে পারেন।
মোটকথা যেখানে বসলে মানুষের নজরে পড়বে আপনি সেখানে ভ্যান নিয়ে বসবেন। তাহলে আপনার বিক্রি বেশি হবে।
আরো পড়ুন : ১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া, মাসে আয় করুন প্রচুর টাকা ।
৫, দক্ষতা
ফলের ব্যবসা শুরু করতে হলে বেশি দক্ষতার প্রয়োজন নেই। তবে স্বাভাবিক ভাবে ফল সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকলেই চলবে।
আর একবার ব্যবসা শুরু করার পর ফলের ব্যবসা সম্পর্কে আইডিয়া চলে আসবে।
৬, সঠিক পণ্য নির্বাচন করা
ব্যবসায় লাভবান হতে হলে আপনাকে সঠিক পণ্য নির্বাচন করতে হবে। কারণ, মানুষ সব সময় ভালো কিছুর আশা করে। সুতরাং আপনাকে কাস্টমার ধরে রাখতে হলে সঠিক পণ্য বিক্রি করতে হবে।
৭, সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা
বাজার মূল্যের সাথে আপনাকেও মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। কেননা, আপনি যদি বেশি লাভ করতে গিয়ে মূল্য বাড়িয়ে ধরেন , তাহলে আপনার ব্যবসায় লাভ হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতিটাই বেশি হবে। সুতরাং আপনাকে সঠিক মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
৮, ফল প্যাকেজিং করা
মানুষ কেনাকাটার ক্ষেত্রেও সৌন্দর্যের প্রতি খেয়াল করে। আপনার ফল যদি সুন্দর না দেখায় , তাহলে মানুষ ক্রয় করবে না।
সুতরাং আপনাকে ফলগুলো সুন্দর ভাবে প্যাকেজিং করে সাজিয়ে রাখতে হবে। তাহলে মানুষ প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে ক্রয় করবে।
৯, প্রতিযোগিতা মুলক মনোভাব
সফলতা অর্জন করতে হলে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। সুতরাং ফল ব্যবসার ক্ষেত্রে ও আপনাকে প্রতিযোগিতা মুলক মনোভাব রাখতে হবে।
অন্যদের থেকে কিভাবে আপনার ব্যবসা উপরে উঠতে পারে , সে সব বিষয় মাথায় রেখে ব্যবসা করা।
১০ , কাস্টমারদের সাথে সদাচরণ করা
ব্যবসার ক্ষেত্রে কাস্টমার হলো আপনার লক্ষী। সুতরাং তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা জরুরি। কাস্টমারদের সাথে ভালো ব্যবহার করলে ,
তাদের সাথে অল্প কথায় ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে পারলে, পরবর্তীতে তারা নিজে এবং তাদের বন্ধুদেরকেও আপনার দোকানে নিয়ে আসবে। সুতরাং তাদের কখনো উত্তেজিত না হয়ে সব সময় ভালো আচরণ করা।
উপসংহার
উপরে ফলের ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে আলোচনা করলাম । ফলের ব্যবসা খুব লাভজনক একটা ব্যবসা।
সুতরাং আপনি যদি উপরোক্ত কথাগুলো মাথায় রেখে ফলের ব্যবসা শুরু করেন। তাহলে আপনি লাভবান হতে পারবেন।
আশাকরি আপনি অনেক উপকার পেয়েছেন । লেখা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।
FAQ
ফলের ব্যবসায় লাভ কেমন ?
ফলের ব্যবসা খুব লাভজনক একটা ব্যবসা। আপনি যদি উপরোক্ত কথাগুলো মাথায় রেখে ফলের ব্যবসা শুরু করেন। তাহলে আপনি লাভবান হতে পারবেন।
এ হিসেবে ফলের ব্যবসায় প্রতি মাসে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন ।