আপনি কি জানতে চান ফেসবুকে ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে ? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
ব্যবসা প্রত্যেকটি মানুষের স্বপ্ন। সকলের মনের মধ্যে ব্যবসা করার চিন্তা ভাবনা থাকে। কিন্তু নানান অসুবিধা ও প্রতিকূলতার কারণে ব্যবসা শুরু করা কঠিন হয়ে পড়ে।
যেমন : প্রত্যেকটি ব্যবসার জন্য প্রথমে পুঁজি নিয়ে চিন্তা করতে হয় এরপর ভালো একটি স্থান নিয়ে চিন্তা করতে হয় যেখানে ব্যবসাটি ভালোভাবে চলবে।
আরো নানান ঝামেলায় পড়তে হয় ব্যবসা শুরু করতে। এই কারণে অধিকাংশ মানুষের স্বপ্ন তথা ব্যবসা করার চিন্তাভাবনা থাকা সত্ত্বেও ব্যবসা শুরু করতে পারে না।
কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন এবং খুশি হবেন। বর্তমান হল ডিজিটাল যুগ। ঘরে বসে খুব সহজেই অনলাইনে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
ধীরে ধীরে মানুষ অনলাইনের প্রতি বেশি ঝুঁকছে এবং আসক্ত হচ্ছে। অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে এবং তারা অনেক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে।
কেননা অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে শ্রম, কষ্ট, সময় আরো নানান বিষয় থেকে খুব সহজেই বেঁচে থাকা যায়। তাই আপনি এই চমৎকার সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন।
অনলাইনে ব্যবসা করার অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো ফেসবুকে ব্যবসা করা।
কারণ আমরা সকলেই জানি ফেসবুক হল বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে শীর্ষে এগিয়ে রয়েছে।
এখানে প্রতিদিন প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষ ভিজিট করে। এখানে আপনি সব ধরনের গ্রাহকদেরকে পাবেন।
ফেসবুকে ব্যবসা শুরু করাটা অনেক সহজ এবং সফলতা লাভ করা অনেক সহজ।
তাই আমি আপনাদের সুবিধার্থে ফেসবুকে ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে তথ্য দিব।
পাশাপাশি নানান ধরনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যাতে করে আপনি খুব সহজেই ফেসবুকে ব্যবসা করে সফলতা লাভ করতে পারেন। চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
ফেসবুকে ব্যবসা করার নিয়ম – ২০২৪
ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম অনেক বিশাল। এখানে নানান ভাবে ব্যবসা করা যায়।যেমন :
- ফেসবুক পেজ তৈরি করে ব্যবসা।
- ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে ব্যবসা
- ফেসবুক গ্রুপ খুলে ব্যবসা
আরো নানান ভাবে ফেসবুকে ব্যবসা করা যায়। ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে ডিসাইড করতে হবে আপনি ব্যবসা করার জন্য কোন মাধ্যমকে গ্রহণ করবেন।
তবে আপনি যদি প্রফেশনাল ভাবে বিজনেস করতে চান তাহলে আপনাকে ফেসবুক পেজ খুলে ব্যবসা শুরু করতে হবে।
এরপর ধীরে ধীরে গ্রুপের মাধ্যমে , মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করবেন। তবে আপনাকে সর্বপ্রথম ফেসবুক পেজের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে হবে প্রফেশনাল ভাবে বিজনেস করার জন্য।
বিস্তারিতভাবে ফেসবুকে অনলাইনে ব্যবসা করার নিয়ম
এখানে আমি ফেসবুকে ব্যবসা করার জন্য কি কি ধাপ অনুসরণ করতে হবে ঐ প্রত্যেকটি ধাপ নিয়ে আলোচনা করুন। যাতে করে আপনি খুব সহজেই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
১. মার্কেট নিয়ে গবেষণা করা
ফেসবুকে ব্যবসা করার আগে আপনাকে মার্কেট নিয়ে গবেষণা করতে হবে। তাহলে আপনি ব্যবসা করে খুব দ্রুত সফলতা লাভ করতে পারবেন এবং অনেক মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।
- আপনাকে দেখতে হবে গ্রাহকরা কোন সমস্ত পণ্য অনলাইন থেকে বেশি ক্রয় করে এবং তাদের ডিমান্ড অনেক বেশি।
- যে সমস্ত পণ্যের প্রতি গ্রাহকদের চাহিদা বেশি কিন্তু তারা সচারচর পায়না। এ ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে।
- আপনার প্রতিযোগী কারা তাদের প্রতি ও লক্ষ্য রাখতে হবে।
মোটকথা আপনাকে ঠান্ডা মাথায় মার্কেট নিয়ে গবেষণা করতে হবে। আপনার প্রতিযোগীদেরকে নির্বাচন করতে হবে।
এ ব্যাপারে আরো জানতে অনলাইন বিজনেস টিপস নামক আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। এখানে আলোচনা করা হয়েছে মার্কেট নিয়ে কিভাবে আপনি গবেষণা করবেন।
তাহলে আপনার কাছে আরো স্পষ্ট হয়ে যাবে কিভাবে আপনি মার্কেট নিয়ে গবেষণা করবেন। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যবসায় সফলতা লাভ করার জন্য।
আশা করি আপনি অবশ্যই এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিবেন। মার্কেট নিয়ে গবেষণা করার পর দ্বিতীয় ধাপ সামনে বলা হল।
২ . ফেসবুক বিজনেস পেজ তৈরি করা
বিজনেস পেজ তৈরি করার জন্য অবশ্যই আপনার একটি ফেসবুক আইডি লাগবে। অর্থাৎ ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
আশা করি আপনার একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। আপনার বিজনেস পেজটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে আলাদা হয়ে যাবে দুইটা এক হবে না।
এ ব্যাপারে টেনশন করবেন না। নিশ্চিন্তে আপনি আপনার ফেসবুক একাউন্ট ব্যবহার করতে পারেন। বিজনেস পেজ খোলার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন।
যখন আপনি এই লিংকে ক্লিক করবেন আপনাকে নতুন একটি পেজে নিয়ে যাবেন। নিচের পিকচারের মত একটি পেজ ওপেন হবে।
পেজ খোলার জন্য আপনাকে একটি ইউনিক নাম দিতে হবে। ইউনিক নাম বের করার জন্য নিচের আর্টিকেলটি পড়তে পারেন ।
আরো পড়ুন :- ২০২৪ সালে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার ১৭টি উপায়
ইউনিক নাম এবং চমৎকার নাম মানুষ খুবই পছন্দ করে এবং খুবই স্মরণ রাখে। পাশাপাশি আপনি যে সমস্ত প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন ওই অনুযায়ী নাম নির্বাচন করা।
যাতে করে আপনার পেইজের নাম শোনার সাথে সাথে গ্রাহকরা বুঝতে পারে এখানে কোন সমস্ত পণ্য বিক্রি করা হয়।
তাই নাম রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রাহকদের ব্যাপারে চিন্তা করে নাম রাখতে হবে। এরপর আপনি আপনার ক্যাটাগরি নির্বাচন করবেন।
অর্থাৎ কোন বিষয়ে বিজনেস করতে চাচ্ছেন এই ক্যাটাগরি নির্বাচন করবেন। এরপর আপনি আপনার ব্যবসা সম্পর্কে কিছু তথ্য দেবেন।
এরপর create page নামক অপশন এ ক্লিক করবেন। আপনার ফেসবুক বিজনেস পেজ তৈরি হয়ে যাবে।
এরপর আপনাকে এই বিজনেস পেজটিকে সাজাতে হবে। সাজানোর ক্ষেত্রে যে সমস্ত বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে।
- কভার ফটো অপশনে মনমুগ্ধকর এবং আকর্ষণীয় কভার ফটো দিতে হবে। যাতে করে সকলে আকর্ষিত হয়।
- পেজের লোগোর অপশনে একটি আকর্ষণীয় লোগো দিতে হবে।
তারপর এবাউট অপশনে গিয়ে আপনার সম্পর্কে নানান তথ্য পূর্ণ করতে হবে। যেমন মোবাইল নাম্বার , ওয়েবসাইট থাকলে ওয়েবসাইটের ঠিকানা। আপনার নিজস্ব ঠিকানা আরো নানান বিষয়।
পেজ তৈরি করার পর অবশ্যই এসব নানান বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখবেন। যাতে করে আপনার বিজনেস পেজ দেখে মনে হয় প্রফেশনাল একটি বিজনেস পেজ।
এবং গ্রাহকরা সকলে আকর্ষিত হয়। এরপর আপনাকে ব্যবসা শুরু করার জন্য আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে।
৩. ফেসবুক স্টোর তৈরি করা
অর্থাৎ আপনি যে সমস্ত পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন ওই সমস্ত পণ্যের একটি স্টোর তৈরি করবেন।
যাতে করে গ্রাহকরা খুব সহজেই একসাথে আপনার বিক্রয়কৃত পণ্যগুলো দেখতে পারে। স্টোর তৈরি করার আপনাকে যেতে হবে ফেসবুকের বিজনেস পেজের মেনু বার থাকে more অপশনে ।
তারপর ইডিট টেব অপশনে ক্লিক করবেন। এরপর নিচে শপ অপশনটি দেখতে পারবেন। তারপর আপনি শপ অপশনটি চালু করবেন।
এরপর খুব সহজে আপনি আপনার স্টোর তৈরি করতে পারবেন। আশা করি আপনি খুব সহজে বুঝতে পেরেছেন। এরপর আপনাকে আপনার বিজনেসের জন্য মার্কেটিং করতে হবে।
৪. ফেসবুক মার্কেটিং নিয়ম
আপনার ব্যবসার জন্য ফেসবুকে মার্কেটিং করতে হবে। মার্কেটিং আপনি দুইভাবে করতে পারেন।
- ফ্রিতে মার্কেটিং।
- পেইড মার্কেটিং।
ফ্রিতে মার্কেটিং করার নিয়ম
ফ্রিতে মার্কেটিং করার অনেক নিয়ম রয়েছে।যেমন :
- ফেসবুক লাইভ করা।
- বিভিন্ন গ্রুপে আপনার বিজনেস সম্পর্কে তথ্য দেওয়া।
- আপনার কোম্পানির পক্ষ থেকে বিভিন্ন অফার দেওয়া।
- বিনোদনমূলক বা ভাইরাল জাতীয় পোস্ট করা বা ভিডিও দেওয়া।
মোটকথা এমন এমন কাজ করা যেগুলো করলে গ্রাহকরা আকর্ষিত হয়। তবে অবশ্যই ফেসবুকের নিয়ম-নীতি অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
ফেসবুকে পেইড মার্কেটিং করার নিয়ম
বর্তমান সময়ে ফেসবুক পেইড মার্কেটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পেইড মার্কেটিং এর মাধ্যমে অল্প সময়ে খুব দ্রুত সফলতা লাভ করা যায়।
এই পদ্ধতি বর্তমানে সকলেই গ্রহণ করছে। পেইড মার্কেটিং এর মাধ্যমে ফেসবুক আপনার কাঙ্খিত গ্রাহকদের কাছে আপনার পণ্যটি পৌঁছে দিবেন।
অর্থাৎ আপনার শুধু কাজ ফেসবুকে টাকা দেওয়া আর ফেসবুক আপনার পণ্যটি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিবে।
facebook পেইড মার্কেটিং এর জন্য অবশ্যই যে সমস্ত বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে।
- আকর্ষণীয়ভাবে ভিডিও এড তৈরি করা। যাতে করে খুব সহজেই গ্রাহকরা আপনাকে গ্রহণ করে। আপনার ভিডিও গ্রহণ করে।
- হাই কোয়ালিটি ইমেজ ব্যবহার করা।
- অ্যাড তৈরি করার সময় বিভিন্ন অফার দেওয়া।
এই সমস্ত বিষয় লক্ষ্য করে ফেসবুক অ্যাড তৈরি করলে আশা করি আপনি খুব সহজে সফলতা লাভ করবেন।
যখন আপনার এড তৈরি হয়ে যাবে তখন ফেসবুকে অ্যাড ম্যানেজার নামে একটা অপশন আছে। সে অপশনে ক্লিক করবেন। তারপর আপনার তৈরিকৃত এডটি সেখানে আপলোড দেবেন।
এরপর একের পর এক ধাপ অনুসরণ করবেন। এভাবে আপনি খুব সহজেই ফেসবুকে পেইড মার্কেটিং করতে পারবেন। পেট মার্কেটিং করে খুব সহজেই অল্প সময় আপনি আপনার লক্ষ্য স্থলে পৌঁছতে পারবেন।
মোটকথা উল্লিখিত পদ্ধতিতে বিজনেস পেজের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনি আপনার বিজনেস টি শুরু করতে পারেন।
যখন আপনি বিজনেস পেজে সফল হয়ে যাবেন। আপনার ফলোয়ার বাড়বে। তখন আপনি ফেসবুক গ্রুপ খুলে সেখানেও বিজনেস করতে পারেন।
দুইটি স্থানে একসাথে ফোকাস দিবেন না। যেকোনো একটিতে সফল হওয়ার পর অপরটিতে ফোকাস দিবেন। তাহলে আপনি খুব সহজেই সফলতা লাভ করতে পারবেন।
পরিশেষে বলবো : উপরে ফেসবুকে ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলাম।
আশা করি আপনি খুব সহজেই বুঝতে পেরেছেন এবং অনেক উপকৃত হয়েছেন। লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। কমেন্ট করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।