আপনি কি মশার কয়েল তৈরির ব্যবসা খুঁজতেছেন ? তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধু আপনার জন্য।
মশার উপদ্রব দিন যত এগোচ্ছে তত বেড়েই চলছে। মশার যন্ত্রণায় সকলেই অতিষ্ঠ হয়ে আছে। এই কারণে অধিকাংশ মানুষই মশার কয়েল ব্যবহার করে থাকে।
আমাদের দেশে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ পার্সেন্ট মানুষ মশার কয়েল ব্যবহার করে থাকে।তাহলে আপনি বুঝতে পারছেন মশার কয়েলের চাহিদা অনেক বেশি।
ভবিষ্যতে চাহিদার বাড়বে। অতএব এই সময়ে মশার কয়েল তৈরির ব্যবসাটা অনেক লাভজনক হবে। খুব দ্রুত অল্প সময়ে এই ব্যবসায় অনেক মোনাফ অর্জন করা সম্ভব।
অনেকেই ভাবছে কিভাবে এই ব্যবসা করা যায়। তাদের বলব টেনশনের কোন কারণ নেই। আজ আমি মশার কয়েল তৈরির ব্যবসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পাশাপাশি এই ব্যবসা শুরু করতে কেমন পুঁজি লাগবে এবং কি কি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে ইত্যাদি নানান বিষয়ে আলোচনা করব।
যাতে করে আপনি খুব সহজেই এই ব্যবসাটি করতে পারেন। কোন ধরনের প্রবলেম এর সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই।
মশার কয়েল তৈরির ব্যবসা ২০২৪
এখানে আমি মশার কয়েল তৈরি করার জন্য কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে এবং কি কি বিষয় প্রয়োজন হতে পারে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। অতএব চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
১. গবেষণা এবং পরিকল্পনা করতে হবে।
অর্থাৎ যারা মশার কয়েল তৈরি করছে তাদের কারখানাগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করুন। তারা কিভাবে তৈরি করছে এবং কোন কোন বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখছে।
এগুলো নোট করুন। এরপর আপনি একটি ব্যবসার শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত কি কি পদক্ষেপ করবেন এগুলো পরিকল্পনা করুন। এতে করে খুব দ্রুত সফলতা লাভ করতে পারবেন।
২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
অর্থাৎ এ ব্যবসা শুরু করার জন্য অবশ্যই আপনাকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজ এবং লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। এগুলো হল :
- ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে।
- ট্রেডমার্ক করে নিতে হবে।
- Php লাইসেন্স করতে হবে।
- টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে হবে।
- বি এস টি আই লাইসেন্স তৈরি করতে হবে।
- আয়কর প্রত্যয়ন পত্র থাকতে হবে।
- ফায়ার লাইসেন্স থাকতে হবে।
- পরিবেশগত অনাপত্তি সনদপত্র থাকতে হবে।
- কারখানার লেআউট তৈরি করতে হবে।
- কৃষি সম্প্রসারণ কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স থাকতে হবে।
ইত্যাদি সমস্ত লাইসেন্স এবং কাগজপত্র ব্যবসা শুরু করার শুরুতে আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে। এতে করে আপনি ভবিষ্যতে কোন ধরনের প্রবলেমের শিকার হবেন না। আশাকরি আপনি বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে নিবেন।
৩. মূলধন প্রস্তুত থাকতে হবে।
অর্থাৎ এ ব্যবসাটি অনেক বড় ধরনের ব্যবসা। অতএব এখানে আপনাকে অনেক মূলধন সংগ্রহ করতে হবে।
মোটামুটি ৫০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। কেননা এই ব্যবসায় যে সমস্ত মেশিন ক্রয় করা হয় এগুলো অনেক দামি। এজন্য মূলধন অনেক বেশি লাগবে।
তবে যদি আপনি ছোটখাটো ভাবে শুরু করতে চান তাহলে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকার মত লাগবে। অতএব আপনাকে শুরু থেকে এই ব্যাপারে প্রস্তুত থাকতে হবে।
৪. প্রয়োজনীয় মেশিন ক্রয়।
কয়েল তৈরি করার জন্য যে সমস্ত মেশিন প্রয়োজন হয় এগুলো আমাদের দেশে পাওয়া যায় না। এগুলো চায়না থেকে আমদানি করতে হয়।
এজন্য পরিবহন খরচ এবং সরকারকে ভ্যাট দিতে হয়। যার কারণে অনেক খরচ হয়ে যায়।
যে সমস্ত মেশিন প্রয়োজন পড়বে :
- চারটি পাঞ্চ মেশিন এগুলোর দাম পড়বে ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা।
- সাতটি পাঞ্চ মেশিন এগুলোর দাম পড়বে ১৮ থেকে ১৯ লক্ষ টাকা।
- ১২ টি পাঞ্চ মেশিন এগুলোর দাম পড়বে ৩২ লক্ষ টাকা।
- ২১টি পাঞ্চ মেশিন এগুলোর দাম পড়বে ৬৫ থেকে ৬৬ লক্ষ টাকা।
এই মেশিনগুলোর সাথে আরো কয়েকটি মেশিন বা পার্টস ক্রয় করতে হবে। এগুলো ছাড়া কয়েল তৈরি করা যাবে না।
- ৬০ কেজি মিক্সার মেশিন ক্রয় করতে হবে।
- তিন সেট কয়েল কাটিং পাঞ্চ মেশিন এগুলোর দাম পড়বে ৫০ হাজার । এটা সর্বনিম্ন। সর্বোচ্চ ৬ লক্ষ টাকা ও আছে।
- একটি পাঁচ কাটিং মেশিন যার সক্ষমতা ঘন্টায় ২ হাজার হতে হবে।
- দুই মডেলের দুই সেট কয়েল ডাইস
- কনভেয়ারসহ হাই প্রেসার কুণ্ডলী লেয়ার তৈরির মেশিন ক্রয় করতে হবে।
কয়েল তৈরি করার জন্য অবশ্যই এ সমস্ত মেশিন গুলো সংগ্রহ করতে হবে। এগুলো আপনি চায়না থেকে খুব সহজেই সংগ্রহ করতে পারবেন।
৫. কারখানা তৈরি ও শ্রমিক নিয়োগ
আপনাকে একটি কারখানা তৈরি করতে হবে। কারখানা যেন অবশ্যই পরিবেশ বান্ধব হয়। এরপর কল তৈরি করার জন্য শ্রমিক সংগ্রহ করতে হবে।
মেশিন চালানোর জন্য অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার ও ইলেকট্রিশিয়ান প্রস্তুত রাখতে হবে। যাতে করে সব ধরনের প্রবলেম এ তারা সলভ করতে পারে।
৬. মশার কয়েল তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হবে।
আপনাকে অবশ্যই বিভিন্ন কেমিক্যাল এবং কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হবে।
পাশাপাশি নাইকেলের ছোলা , বিভিন্ন গাছ , বালু সংগ্রহ করতে হবে।
আর যে সমস্ত কেমিক্যাল সংগ্রহ করতে হবে সেগুলো হল:
- এমজিকে এন
- পাইপারনিল বাটক্রাইড
- এমজিকে ২৬৪ এন ( এটি পাইথ্রেয়েডকে আরো কড়া এবং উন্নত করতে ব্যবহার করা হয়। )
- অ্যালেথ্রিন
- বি এইচটি (বাটলেটেড হাইড্রোক্সিটোলিউইন )
- পাইরেথ্রাম (এটা কোসিনিয়াম নামের এক ধরনের গাছের গুড়া। আর এই গুরাটি পাইরেথ্রাম গাছটির ফুল থেকে তৈরি হয়। )
- ডাইমফ্লথ্রিম
- এমবিথোথ্রিন
- পাইথ্রেয়েড
- ম্যাফ্লুথ্রিন
৭. তৈরি কৃত কয়েল বিক্রি করা
আপনি যে কয়েলগুলো তৈরি করছেন এগুলো বিক্রি করতে হবে। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য আপনাকে কয়েকটি বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
- প্রথম পর্যায়ে আপনি গ্রামের দিকে কোয়েল গুলো বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। শহরের দিকে বিক্রি করার চেষ্টা করবেন না। কেননা শহরে বড় বড় কোম্পানি রয়েছে যারা অলরেডি মার্কেট দখল করে রেখেছে।
- যখন আপনার কোম্পানি একটি ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি হবে। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে তখন শহরে বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।
- বেশি বেশি সাপ্লাই দিতে হবে।
- যে সমস্ত দোকানদাররা আপনার কয়েল বিক্রি করবে তাদের কমিশন প্রথম প্রথম বেশি দিতে হবে। এতে করে তার আগ্রহ হয়ে বেশি সেল দেওয়ার চেষ্টা করবে।
- মার্কেটিং এ দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। মার্কেটিং যত বেশি করবেন আপনার সেল তত বেশি হবে।
- মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনাকে প্রচুর সময় দিতে হবে এবং পরিশ্রম করতে হবে। তাহলে আপনি খুব সফলতা লাভ করতে পারবেন।
পরিশেষে বলবো :
উপরে মশার কয়েল তৈরির ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো। যদি বিষয়গুলো আপনি ফলো করেন তাহলে খুব সহজেই সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
যদি লেখাটি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। বন্ধু বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন : ১০০০ টাকায় ব্যবসা করার দারুণ ১০টি আইডিয়া, প্রতিমাসে ৩৫০০০ টাকা আয়