তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন ও দোয়া সমূহ বিস্তারিতভাবে | তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল ?

আপনি তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান  ? তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধু আপনার জন্য।

রমজান মাসের অন্যতম একটি ইবাদত হল তারাবির নামাজ। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবির নামাজ নিজে পড়েছেন।

এবং সাহাবাদেরকে পড়ার আদেশ দিয়েছেন। তারাবির নামাজে অনেক গুরুত্ব রয়েছে। তারাবির নামাজ প্রত্যেক পুরুষ এবং নারীর জন্য আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

বিশেষ করে জামায়াতের সাথে তারাবির নামাজ আদায় করা অনেক ফজিলত রয়েছে এবং অনেক নেকী হয়।

পাশাপাশি রমজান মাসে তারাবিতে কোরআন খতম করার অনেক ফজিলত রয়েছে এবং অনেক সওয়াব হয়। তবে সুরা তারাবিও পড়া যায়।

স্বাভাবিকভাবে আমরা তারাবির নামাজ 20 রাকাত করে থাকি। আজ আমি তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব।

যাতে করে খুব সুন্দর ভাবে নিয়মকানুন মেনে তারাবির নামাজ আদায় করা যায়। তাই অবশ্যই আপনাকে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়তে হবে।

তাহলে আপনি তারাবির নামাজ সম্পর্কে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। চলুন আলোচনা শুরু করা যাক ।

তারাবির নামাজের নিয়ম

তারাবির নামাজের নিয়ম

নামাজের নিয়ম বলার আগে আমি আলোচনা করব তারাবির নামাজ কি , নামাজের নিয়ত , ইত্যাদি নানান বিষয় ।

তাহলে বিষয়গুলো আপনার কাছে আরও স্পষ্ট হবে। কোন সংশয় থাকবে না ।  চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

তারাবির নামাজ কি ?

রমজান মাসে এশার নামাজ আদায় করে বেতেরের পূর্বে দুই রাকাত দুই রাকাত করে 10 সালামে 20 রাকাত যে নামাজগুলো আদায় করা হয় তাকেই বলা হয় তারাবির নামাজ।

তারাবির শাব্দিক বিশ্লেষণ : তারাবি এর অর্থ : বিশ্রাম । তারাবি কে তারাবি বলে নাম করার কারণ হলো : যেহুত অনেক লম্বা কেরাত পড়ে এই নামাজ আদায় করা হয়।

তাই প্রতি চার রাকাত পর পর বিশ্রাম নেয়া হয়। তাই তাকে তারাবির নামাজ বলে নামকরণ করা হয়েছে।

তারাবির নামাজ প্রত্যেক বিবেকবান পুরুষ এবং মহিলার জন্য আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

তারাবির নামাজের নিয়ত

প্রত্যেক নামাযের জন্য নিয়ত করা ফরজ। চাই সেটা সুন্নত নামাজ হোক অথবা ফরজ নামাজ হোক অথবা নফল নামাজ হোক অথবা তারাবির নামাজ হোক।

তারাবির নিয়ত ইচ্ছা করলে আপনি আরবিতে করতে পারেন আবার বাংলাও করতে পারেন।

আমি আরবি এবং বাংলা দুনোটাই বলে দিচ্ছি।

আরবিতে তারাবির নামাজের নিয়ত : 

نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাক’আতাই সালাতিত তারাবিহি সুন্নতু 

রসুলিল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবর।

বিস্তারিতভাবে তারাবির নামাজের নিয়ম

তারাবির নামাজ অন্যান্য নামাজের মত। আলাদা কোনো নিয়ম নেই। তবুও সংক্ষেপে বলে দিচ্ছি তারাবির নামাজের নিয়ম : দুই রাকাতের নিয়ত করে নামাজ শুরু করবেন।

নিয়ত বেঁধে ছানা ইত্যাদি পড়ে সূরা ফাতিহা পড়বেন এরপর লম্বা কেরাত পড়বেন। কোন তাড়াহুড়া করবেন না।

তারপর রুকু সেজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করবেন। এরপর আবার দ্বিতীয় রাকাত আগের নিয়মে পড়বেন।

অর্থাৎ সূরা ফাতিহা পড়ে লম্বা একটি কেরাত পড়বেন। এরপর রুকু সিজদা ও শেষ বৈঠক করে দুই রাকাত শেষ করবেন।

এভাবেই দুই রাকাত আদায় করবেন। এরপর আবার নতুন করে প্রথম দু’রাকাত এর মত আরো দুই রাকাত পড়বেন।

এই হিসাবে চার রাকাত হলো। অর্থাৎ আগের দুই রাকাত এবং পরের দুই রাকাত মিলে চার রাকাত হলো।

এই চার রাকাত আদায় করার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবেন। আর এই বিশ্রামের সময় দোয়া দরুদ , তাসবিহ তাহলিল ও জিকির-আজকার পড়বেন। এবং এই দোয়াটি পড়বেন :

তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া

আরবি দোয়া : 

سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ

বাংলাতে উচ্চারণ : সুবহানা যিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি , সুবহানাজিল ইজ্জাতি অল আজমতি

অল হাইবাতি অল কুদরতি অল কিবরিয়ায়ি অল জবরুতি। সুবহানাল মালিকিল হাই হাইয়্যিল্লাযি লা য়ানামু ওলা ইয়ামুতু আবাদান আবাদান । সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রব্বানা ও রব্বুল মালাইকাতি অর্ রুহি।

এই দোয়াটি পড়ার পর আবার নতুন করে শুরু করবে। আগের নিয়মে দুই রাকাত দুই রাকাত করে পড়বেন যখন চার রাকাত হয়ে যাবে আবার কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিবেন এই দোয়াটি পড়বেন।

এইভাবে 20 রাকাত আদায় করবেন। আর এই বিশ রাকাত পর্যন্ত মোট ৫বার বিশ্রাম করবেন। তারপর দোয়া করবেন।

Read more :তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও সময়: সঠিক উপায়ে বিস্তারিতভাবে জানুন !

তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত

যখন বিশ রাকাত তারাবির নামাজ পড়া হয়ে যাবে। তখন মোনাজাত করতে হবে। মোনাজাতের ধারাবাহিকতা অনেক আগে থেকেই আসছে।

প্রসিদ্ধ একটি বিষয়। তবে এই মোনাজাতকে আবশ্যক মনে করা যাবে না। অনেকে মনে করে দোয়া ছাড়া তারাবির নামাজ হবে না।

কাজের মনের ধারণা একদম ভুল। দোয়া ছাড়াও তারাবির নামাজ পড়া যায় কোন সমস্যা নেই।

মোনাজাতের দোয়া : 

আরবিতে দোয়া

اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ

বাংলায় উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওনা আ’উযু বিকা মিনান্নার। ইয়া খালি কাল জান্নাতি ওন্নার।

বিরাহমাতিকা ইয়া আজিজু ইয়া গফফার। ইয়া কারিমু ইয়া ছাত্তার ইয়া রাহিমু ইয়া জাব্বারু ইয়া খালিকু ইয়া বার।

আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার ইয়া মুজিরু ইয়া মুজিরু ইয়া মুজির বিরহ রাহমাতিকা ইয়া আর্ হামার রাহিমীন।

এই দোয়াটি তারাবির নামাজের শেষে পড়া হয়।

তারাবির নামাজের ফজিলত

তারাবির নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে : 

তারাবির নামাজ হলো গুনাহ মাফের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি মাধ্যম। রমজান মাসের তারাবির নামাজ বা তাজতের নামাজ পড়লে তার বিগত জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।

যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানের বা বিশ্বাসের সাথে ছোয়াবের আশায় দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে ।

তাহলে তার আগের সমস্ত গুনাহকে আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন । সহি বুখারী শরীফ ও সহীহ মুসলিম শরীফ।

পরিশেষে বলব :

উপরে তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। অতএব আপনি উপরের বিষয়গুলো পরে তারাবি নামাজ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা নিতে পারবেন।

যদি আপনাদের কোন উপকার দিয়ে থাকে। তাহলে অবশ্যই জানাবেন। বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

FAQ

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল ?

তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। নফল না। সুন্নতে মুয়াক্কাদা হওয়ার কারণে ছেড়ে দিলে গুনা হবে। অতএব পুরুষ এবং মহিলাদের সকলের জন্য তারাবি নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।

তারাবির নামাজ কত রাকাত এবং কিভাবে পড়বেন ?

তারাবির নামাজ দুই দুই রাকাত করে 10 সালামে মোট 20 রাকাত।

মহিলাদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম কি ?

মহিলাদের তারাবির নামাজের আলাদা কোনো নিয়ম নেই। পুরুষদের যেরকম নিয়ম মহিলাদের এক নিয়ম। অতএব মহিলারা দুই দুই রাকাত করে 10 সালামে বিশ রাকাত আদায় করবে।

তারাবির নামাজ কয়টা পর্যন্ত পড়া যায় ?

এশার নামাজের পর থেকে নিয়ে ফজর পর্যন্ত তারাবির নামাজ পড়া যায়।

I always like to learn and spread new things. So my main aim is to bring up new topics related to all types of business ideas.

Leave a Comment