আপনি কি জানতে চান তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ? প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর অন্তরে এই প্রত্যাশা থাকে যে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।
তাই তারা জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য ইসলামের প্রদত্ত ফরজ হুকুম আহকাম পালন করে থাকে।
তারা মনে মনে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে যে, সে কি উপায় অথবা অতি সহজে কোন আমল করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে সে আমলটি অন্বেষণ করতে থাকে।
অতি সহজে জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য বিভিন্ন ইসলামিক বই অথবা ইসলামী স্কলারদের আলোচনা শুনে থাকে।
ইসলামিক স্কলারদের আলোচনায় কিংবা বিভিন্ন ধর্মীয় বই আমরা জান্নাতে প্রবেশ করার বেশ কয়েকটি সহজ উপায়ের মধ্যে আমাদের একটি সহজ আমল দৃষ্টিগোচর হয়, সেটি হল তাহাজ্জুদ নামাজ।
কিন্তু আমরা সেই তাহাজ্জত নামাজ কখন আদায় করব? অথবা কিভাবে আদায় করব ? কোন দোয়া পড়তে হবে ইত্যাদি প্রশ্ন আমাদের স্মৃতিপটে ঘুরপাক খেতে থাকে।
আজ আমরা কখন নামাজ পড়বো ? তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম বা কিভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বো ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
নামাজের নিয়ম বলার আগে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব। যেমন তাহাজ্জুদ নামাজ কি ? , নামাজের সময় কখন ইত্যাদি এ সমস্ত বিষয়ে আলোচনা করে এরপর বিস্তারিত নিয়ম আলোচনা করব। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন।
তাহাজ্জুদ নামাজ কি ?
তাহাজ্জত অর্থ: রাত জাগা। গভীর রাতে নিন্দ্রা ত্যাগ করে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো অর্থাৎ ইবাদতে লিপ্ত হওয়া কে তাহাজ্জুদ বলে।
এই নামাজ খুবই ফজিলতপূর্ণ। তাহাজ্জুদ নামাজ একটি নফল ইবাদত। ফরজ ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজ পর, নফল নামায সমূহের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সবচেয়ে বেশি।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন: আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সেজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়। (সূরা ফুরকান, আয়াত: ৬৫)
আরো পড়ুন :
- ফি আমানিল্লাহ অর্থ কি ও উত্তরে কি বলতে হয় ?
- মাশাআল্লাহ অর্থ কি ও কখন বলতে হয় ?
- আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি ও এর উপকারিতা কি ?
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়
তাহাজ্জত নামাজের সময় হলো: এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকে পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ ফজরের নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। পবিত্র কুরআনুল কারীম তাহাজ্জুত নামাজ সম্পর্কে অবতীর্ণ আয়াতে, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের অত্যধিক ফজিলতপূর্ণ সময় বর্ণনা করা হয়েছে। নিম্নরূপ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে সূরা আয-যারিয়াতের 17,18 নাম্বার আয়াতে বলেন: তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লাম ইরশাদ করেন: আমাদের প্রভু পরওয়ারদিগার তাবারকা ওয়া তায়ালা প্রত্যেক রাতে দুনিয়ার আসমানে (যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়) নেমে আসেন যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে।
অতঃপর তিনি বলেন তোমাদের কেউ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দেব। কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। ( মুসলিম, মিশকাত)
উপরে উল্লেখিত আয়াত এবং হাদিস থেকে বুঝা গেল যে, তাহাজ্জুদ নামাজের অতি ফজিলতপূর্ণ সময় হল, অর্ধ রাতের পরে, রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। অর্থাৎ ফজরের নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার এক থেকে দেড় ঘন্টা পূর্বে।
ইসলামে তাহাজ্জুত নামাজের অনেক গুরুত্ব রয়েছে, ইসলাম অনেক সহজ যদি আপনি তার হুকুম আহকাম গুলো আদায় করেন।
আল্লাহ তাআলা দেনেওয়ালা, কৃপণ নয়। আপনি যদি রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিক্রম হওয়ার পর তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে সক্ষম না হয়ে থাকেন, তাহলে ঘুমানোর পূর্বে তাহাজ্জুত নামাজ আদায় করে ঘুমাবেন।
যদি একটিও সক্ষম না হয়ে থাকেন তাহলে, এশার নামাজের পর সুন্নত ও বিতর নামাজ আদায় করে, দুই রাকাত অথবা চার রাকাত কিংবা আট রাকাত নামাজ পড়ে নিতে পারেন। যেটা তাহাজ্জুদের নামাজ বলে গণ্য হবে।
কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে যখন আল্লাহ তাআলা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় কারীদের দাঁড়া করাবেন , তখন আপনিও আপনাদের কাতারে শামিল হতে পারবেন, তবে যারা রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিক্রম হওয়ার পর তাহাজ্জুত নামাজ আদায় করবে ,তাদের মর্যাদা বেশি থাকবে।
ওলামায়ে কেরাম এটার বর্ণনা অথবা উদাহরণ এভাবে বলে থাকেন: যারা ঘুমানোর পূর্বে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে সেটা হল সাধারণ ভাত মাংস। আর যারা রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিক্রম হওয়ার পর তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে, সেটার দৃষ্টান্ত হলো বিরিয়ানি।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম :
তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য তেমন কোনো ভিন্ন নিয়ম নেই, যেভাবে অন্যান্য সুন্নত, নফল নামাজ আদায় করেন অনুরূপ তাহাজ্জুত নামাজও আদায় করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম দুই রাকাত দুই রাকাত করে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন। এভাবে ৮ রাকাত পড়তেন।
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত ?
তাহাজ্জুত নামাজের পরিসংখ্যান দুই রাকাত থেকে আট রাকাত পর্যন্ত পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কখনো চার রাকাত কখনো আট রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েছিলেন।
আপনি আট রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করুন, আট রাকাতের সম্ভব না হলে, চার রাকাত আদায় করুন, যদি সেটাও না হয় দুই রাকাত আদায় করুন।
শেষ কথা :
আমি তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম উল্লেখ করেছি যে, সকল মুসলিম নর-নারী স্বীয় অন্তরে এই বাসনা রাখে যে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।
আমি বলব জান্নাতে প্রবেশ করা খুবই সহজ। যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করবে এবং ইসলামের হুকুম আহকাম পরিপূর্ণভাবে আদায় করবে সে বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো ইসলামের হুকুম আহকাম কি? ইসলামের বেশ কয়েকটি হুকুম-আহকাম রয়েছে, এর মধ্যে অল্প কয়েকটি হুকুম আহকাম পরিপূর্ণ ভাবে আদায় করলে অতি সহজে জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে।
- সর্ব রকমের গুনা পরিত্যাগ করা।
- নামাজ আদায় করা।
- যাকাত দেওয়া।
- সামর্থ্য থাকলে হজ্ব করা।
এই চারটা জিনিস পরিপূর্ণ ভাবে আদায় করলে অতি সহজে জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে।
এখন আসি দ্বিতীয় কথায়: আমাদের মাঝে বেশ কিছু অতি আবেগী ভাই আছে, যারা রাত্রি জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে, কিন্তু ফজর নামাজের আগে ঘুমিয়ে পড়ে। এটা মোটেও ঠিক নয়।
তাহাজ্জুদ নামাজ আপনার উপর ফরয নয়, কিন্তু ফজরের নামাজ আপনার উপর ফরজ। তাহাজ্জুদ নামাজ না পড়লে গুনা হবে না, কিন্তু ফজরের নামাজ না পড়লে আপনার গোনা হবে। অতএব অতি আবেগী না হই।
পরিশেষে বলব : উপরে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যদি আমার লেখা ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।