আপনি কি রেস্টুরেন্ট ব্যবসার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে আপনি সঠিক স্থানে এসেছেন। এই লেখাটি শুধু আপনার জন্য।
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং লাভজনক ব্যবসা হলো রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। রেস্টুরেন্টের রকমারি খাবার কে না খেতে চায়।
কিশোর, জওয়ান,বৃদ্ধ সবাই বাসার খাবার থেকে রেস্টুরেন্টের খাবার কে খুব বেশি পছন্দ করে। বন্ধু-বান্ধব এবং স্বামী-স্ত্রী অধিকাংশ সময় শখের বশে খেতে যায় রেস্টুরেন্টে।
বর্তমান সময়ে কোন সমিতি কিংবা কোন ফ্যক্টারির মিটিং হয় রেস্টুরেন্টে। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে ট্রিট দিয়ে থাকে ভালো কোন রেস্টুরেন্টে।
সুতরাং, এই বিশাল জনপ্রিয় এবং উর্ধমুখী রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করে আপনি দ্রুত লাভবান হয়ে সফল ব্যবসায়ীদের তালিকায় নাম লেখাতে পারেন।
তবে, এক্ষেত্রে আপনাকে অনেকগুলো বিষয়ে খুব ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে। কেননা, ডিসিপ্লেন ছাড়া কোন ব্যবসায় কখনো লাভবান হওয়া যায় না।
সুতরাং, আপনি যদি রেস্টুরেন্ট ব্যবসার নিয়ম সম্পর্কে আইডিয়া পেতে চান এবং দ্রুত লাভবান হতে চান ।
তাহলে আপনার জন্য এই আর্টিকেলটি। এক্ষেত্রে ধর্য্য সহকারে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত আপনাকে মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
রেস্টুরেন্ট ব্যবসার নিয়ম ২০২৪
একটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় দ্রুত লাভবান হতে চাইলে আপনাকে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা থাকা আবশ্যক। সে বিষয়গুলো নিচে আলোচনা করা হলো।
- রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিকল্পনা করা ।
- রেস্টুরেন্টের জায়গা নির্ধারণ করা ।
- রেস্টুরেন্ট ব্যবসার পুজি ।
- রেস্টুরেন্ট ব্যবসার লাইসেন্স করা ।
- রেস্টুরেন্টের খাবার নির্ধারণ করা ।
- ডেকোরেশন ও ডিজাইনের প্রতি লক্ষ্য রাখা ।
- রেস্টুরেন্ট উদ্ববোধন ।
- অনলাইনে প্রচার ।
- হোম ডেলিভারি ।
- স্পেশালিস্ট খাবার নির্ধারণ করা ।
- বিশেষ দিবস উপলক্ষে অফার দেওয়া ।
- রেস্টুরেন্টের বাজার সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করা ।
- রাঁধুনি ও ওয়েটার নিয়োগ দেয়া ।
- পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ।
- গাড়ি পার্কিং এর জায়গ রাখা ।
- কাস্টমারের সাথে সদাচরণ করা ।
১, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিকল্পনা করা ।
অনেকে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় লাভবান হতে পারে না। তার অন্যতম একটা কারণ হলো , তারা কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করে দেয়।
এই ভুলের জন্য তারা সফল হতে পারে না। একটা কথা সব সময় মনে রাখা উচিত যে, কোন কাজে সফল হতে হলে পূর্ব পরিকল্পনা থাকা অপরিহার্য।
কেননা, পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া কাজে কোন ডিসিপ্লেন থাকে না। এজন্য রেস্টুরেন্ট ব্যবসার আগে পরিকল্পনা থাকতে হবে।
মোটকথা আপনাকে পূর্ব থেকেই রেস্টুরেন্টের একটা ছক তৈরি করে রাখতে হবে।
২, রেস্টুরেন্টের জায়গা নির্ধারণ করা ।
রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় জনপ্রিয় এবং লাভবান হতে হলে রেস্টুরেন্টের প্লেস তথা জায়গার ব্যপারে আপনাকে খুব খেয়াল রাখতে হবে।
খুব ভেবেচিন্তে আপনাকে রেস্টুরেন্টের জায়গাটা নির্ধারণ করতে হবে। এমন জায়গা নির্ধারণ করবেন, যেখানে মানুষের আনাগোনা খুব বেশি হয়ে থাকে।
সেটা অফিসিয়াল কাজে হতে পারে । আবার ঘুরাঘোরির জন্য ও হতে পারে। আপনি যদি এমন জায়গা নির্ধারণ করেন, যেখানে মানুষের আনাগোনা কম।
তাহলে আপনি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় লাভবান হতে পারবেন না। এজন্য আপনাকে জায়গা নির্ধারণের কাজটা একটু সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
৩, রেস্টুরেন্ট ব্যবসার পুজি ।
রেস্টুরেন্টের জায়গা নির্ধারণ করার পর আপনাকে ব্যবসার মূলধন নিয়ে ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি ব্যাংক থেকে ব্যবসায়িক লোন নিতে পারেন।
যদিও আপনার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে মূলধন থাকে। তারপরও আপনাকে ব্যাংক থেকে লোন নিতে হবে।
অন্যথায় আপনি দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে জড়িয়ে যাবেন। সুতরাং এক্ষেত্রে আপনাকে খুব সতর্কতার সাথে সামনে অগ্রসর হতে হবে।
আরো পড়ুন : বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার ১৬টি আইডিয়া ২০২৪
৪, রেস্টুরেন্ট ব্যবসার লাইসেন্স করা ।
যে কোন বিষয়ে সরকারী অনুমোদন থাকলে নির্ভয়ে কাজ করা যায়। আর বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে তো এটা আবশ্যক। রেস্টুরেন্ট ব্যবসার জন্য আপনাকে ১০ টি লাইসেন্স করতে হবে।
- ট্রেড লাইসেন্স
- স্যানিটারি লাইসেন্স
- ফায়ার লাইসেন্স
- প্রেমিসেস লাইসেন্স
- পরিবেশ ছাড়পত্র
- কৃষি উপকরণ সনদ
- বিএসটিআই সনদ
- কারখানা সনদ
- ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন
- রেস্তোরা পরিচালনার লাইসেন্স
৫, রেস্টুরেন্টের খাবার নির্ধারণ ।
আপনি যে এলাকায় রেস্টুরেন্ট দিয়েছেন। সেখানকার স্থানীয় মানুষের রুচি সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে।
স্থানীয় এবং সেখানে আনাগোনা মানুষের রুচি অনুযায়ী আপনাকে খাবারের মেনু নির্ধারণ করতে হবে। কোন আইটেমের খাবার তৈরী করবেন তাও নির্ধারণ করতে হবে । যেমন :
- সীফুড
- থাই ফুড
- বাঙালি খাবার
- ইতালিয়ান ফুড
- কোরিয়ান , চাইনিজ , ইন্ডিয়ান , এরাবিয়ান , তুর্কীয়ান ইত্যাদি।
তবে সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো যে কোন নির্দিষ্ট একটি খাবারের দিকে টার্গেট করা। যাতে করে এই খাবারটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে যায়। লোকজন বিভিন্ন স্থান থেকে এ খাবারটি খেতে আসে।
এক্ষেত্রে আপনি সকাল, দুপুর ও রাতের জন্য তিনভাগে বিভক্ত করে খাবারের আইটেম রাখতে পারেন। তবে , এক্ষেত্রে ও আপনাকে আপনার কাস্টমারদের রুচির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
৬, ডেকোরেশন এবং ডিজাইনের প্রতি লক্ষ্য রাখা ।
মানুষের মন জয় করতে হলে আপনাকে একটু উন্নত মানের ডেকোরেশন ব্যবহার করতে হবে। সাথে সাথে একজন রুচিশীল ডিজাইনারের থেকে সুন্দর ডিজাইন ও করতে হবে।
কাস্টমার যাতে একবার আপনার রেস্টুরেন্টে আসার পর বারবার আসতে চায়।
৭, রেস্টুরেন্ট উদ্ববোধন ।
রেস্টুরেন্টের সব ব্যবস্থাপনা হয়ে গেলে আপনাকে রেস্টুরেন্ট উদ্ববোধন সম্পর্কে মনোযোগী হতে হবে।
এক্ষেত্রে রেস্টুরেন্টের পরিচিতি করার জন্য আপনি উদ্ববোধনের দিন কিছু টেকনিক ব্যবহার করতে পারেন।
যেমন- উদ্ববোধনের দিন খাবারের সব মেনুতে আপনি ডিসকাউন্ট দিতে পারেন। এতে আপনার প্রথম দিন বিক্রি বেশি হবে আবার রেস্টুরেন্টের পরিচিতি ও হয়ে যাবে।
আরো টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে।যেমন- কোন সেলিব্রিটি কে আপনি উদ্ববোধনের দিন ইনভাইট করতে পারেন। এতেও আপনার রেস্টুরেন্টের পরিচিতি হবে।
৮, অনলাইনে প্রচার ।
বর্তমান সময়ে সব কিছুই অনলাইন ভিত্তিক। মানুষ কোন জিনিস সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে অনলাইনে সার্চ করে।
সুতরাং আপনার রেস্টুরেন্টের সব ডিটেইলস থাকতে হবে। এবং ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে আপনাকে প্রতিনিয়ত আপডেট দিতে হবে।
এর মাধ্যমে দূর-দুরান্ত থেকে আপনার কাস্টমার আসবে। খাবারের রিভিউ যাতে সুন্দর হয় । সেক্ষেত্রে আপনি যে সব ইউটিউবার খাবারের রিভিউ দেয় , তাদের কে আপনি ইনভাইট করতে পারেন।
৯, হোম ডেলিভারি ।
বর্তমান সময়ে অফলাইন থেকে অনলাইন মার্কেটিং বেশি হয়ে থাকে। অনলাইনে আপনার রেস্টুরেন্টের রিভিউ দেখে মানুষ অনলাইনে অর্ডার করতে পারে।
তাছাড়া অনেকেই অফিস ও অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে রেস্টুরেন্টে না এসে অনলাইনে অর্ডার করবে। সুতরাং আপনার হোম ডেলিভারি সার্ভিসটি সর্বদা চালু রাখতে হবে।
১০, স্পেশালিস্ট খাবার নির্ধারণ করা ।
যে কোন রেস্টুরেন্টের বৈশিষ্ট্য হলো তারা যে কোন একটা খাবারের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করে।
সুতরাং আপনাকে ও এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি স্থানীয় এবং সেখানে আনাগোনা মানুষের রুচির প্রতি খেয়াল রেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
১১, বিশেষ দিবস উপলক্ষে অফার দেওয়া ।
রেস্টুরেন্ট ব্যবসা জনপ্রিয় করার জন্য বিশেষ দিবস উপলক্ষে অফার দেওয়া একটা কর্যকরী টেকনিক।
একটা বিষয় মনে রাখবেন লাভ সীমিত হয়ে যদি ছেল বেশি হয় , তাহলে এটাই প্রকৃত লাভ।
১২, রেস্টুরেন্টের বাজার সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করা ।
রেস্টুরেন্টে যে সমস্ত খাবার রান্না করা হবে। সেগুলো ক্রয় করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
সব সময় তাজা জিনিসপত্র বাজার করবেন। কখনো পঁচা বা বাশি কিছু বাজার করবেন না।
১৩, রাঁধুনি ও ওয়েটার নিয়োগ দেয়া ।
আপনার রেস্টুরেন্ট জনপ্রিয় করার জন্য আপনাকে খাবারের মান এবং টেস্ট বাড়াতে হবে। সুতরাং রেস্টুরেন্টের রান্না ভালো হওয়ার জন্য আপনাকে সেরা এবং অভিজ্ঞ রাঁধুনি রাখতে হবে।
আর ওয়েটার নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে একটু খেয়াল রাখতে হবে। দেখতে স্মার্ট , শিক্ষিত এবং ভদ্র দেখে নিয়োগ দিতে হবে।
১৪, পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ।
পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা মানুষের মন কে মুগ্ধ করতে পারে। পরিবেশের সৌন্দর্য মানুষের রুচি কে বৃদ্ধি করে।
মানুষ যখন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ এবং রুচিশীল খাবার পেয়ে যাবে তখন তারা আপনার রেস্টুরেন্টে বারবার আসবে।
১৫, গাড়ি পার্কিং এর জায়গা রাখা ।
অনেক রেস্টুরেন্টের কাস্টমার কম হওয়ার একটা কারণ হলো তাদের রেস্টুরেন্টে গাড়ি পার্কিং এর জায়গা না থাকা।
কেননা, মানুষ দূর-দুরান্ত থেকে গাড়ি নিয়ে পরিবারসহ লাঞ্চ অথবা ডিনারের জন্য রেস্টুরেন্টে আসে। সুতরাং তারা ঐসব রেস্টুরেন্টের খোঁজ নেয় যেখানে গাড়ি পার্কিং এর জায়গা থাকে।
১৬, কাস্টমারের সাথে সদাচরণ করা ।
কাস্টমার ধরে রাখার অন্যতম একটা টেকনিক হলো , কাস্টমারের সাথে সদাচরণ করা।
কারণ, সুন্দর আচার-ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই মানুষের মন জয় করা যায়। আর মানুষ যেখানে ব্যবহার ভালো পায়, সেখানে বারবার যেতে চায়। আশাকরি রেস্টুরেন্ট ব্যবসার নিয়ম ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন ।
রেস্টুরেন্টের খাবারের নাম ও ছবি
রেস্টুরেন্টে যে সমস্ত খাবার স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যায় সে সমস্ত খাবারের তালিকা দেওয়া হলো । পাশাপাশি ছবি দেওয়া হলো যাতে সহজেই বুঝতে পারেন ।
Beef
- Grilled beef
- beef steak
- mongolian beef
- beef bourguignon
Chicken
- Chicken curry lftari
- chicken curry
- fried chicken
- chicken tikka
Salads
- Vegetable salad
- salad
- colorful summer salad
- salad healthy
Appetizers
- Italian bruschetta Appetizers
- Appetizers
Soups
- Chicken Soup
- tpmato Soup and zucchini Soup
- vegetable Soup
- Lemon chicken Soup
Rice
- colombian fried Rice
- indonsian traditional rice with chicken
- biryani rice
- fried rice
পরিশেষে বলবো :
উপরে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার নিয়ম বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন। এই ব্যবসাটি অনেক সহজ একটি ব্যবসা।
নিষ্ঠার সাথে সঠিক নিয়মে আপনি যদি ব্যবসাটি করতে পারেন তাহলে অল্প সময়ে সাফল্যের মুখ দেখতে পারবেন এবং অনেক লাভবান হতে পারবেন।
অতএব আপনি যদি এই ব্যবসাটি করতেই চান তাহলে উপরের নিয়ম ফলো করবেন। এই লেখাটা যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।
FAQ
রেস্টুরেন্ট ব্যবসা কেমন লাভ ?
ছোট আকারের রেস্টুরেন্ট ক্ষেত্রে প্রতিমাসে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা ইনকাম করা সম্ভব।
মধ্যম ধরনের রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে প্রতিমাসে দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা ইনকাম করা সম্ভব।
বড় আকারের রেস্টুডেন্টদের ক্ষেত্রে প্রতিমাসে ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা ইনকাম করা সম্ভব।
রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করতে নূন্যতম কত টাকা লাগে ?
ছোট আকারের রেস্টুরেন্ট দিতে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।
মধ্যম ধরনের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করতে গেলে মোটামুটি চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা লাগবে।
আর যদি আপনি বড় আকারের রেস্টুরেন্ট দিতে চান তাহলে ২০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন।
Its a very good and cristal clear idea for Hotel and restaurant business. Thank you so much for this idea.