আপনি কি মুদি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে এ আর্টিকেলটা আপনার জন্য।
অল্প পুঁজির মধ্যে মুদি দোকানের ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা। আমাদের আশেপাশে এখন অনেক মুদি দোকান রয়েছে।
আর এই মুদি ব্যবসার চাহিদা ও বর্তমান সময়ে অনেক বেশি। কারণ, মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মুদি দোকান থেকে ক্রয় করে থাকে।
আপনি যদি অল্প পুঁজির মধ্যে কোন ব্যবসা করতে চান , তাহলে আপনি মুদি দোকানের ব্যবসা করতে পারেন। বর্তমান সময়ে এটি একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা।
তাই আজ আমি আপনাদের সুবিধার্থে মুদি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
পাশাপাশি মুদি ব্যবসার জন্য কোন কোন বিষয়ের প্রতি বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে সে বিষয়গুলো আলোচনা করব।
যাতে করে আপনি খুব সহজেই মুদি ব্যবসা করতে পারেন। সুতরাং শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে আপনাকে আর্টিকেলটি পড়তে হবে।
মুদি ব্যবসার আইডিয়া ২০২৪
মুদি ব্যবসায় লাভবান হওয়ার জন্য আমি আপনাকে কিছু গাইডলাইন দিবো। সুতরাং ব্যবসায় লাভবান হওয়ার জন্য এই গাইডলাইনগুলো অনুসরণ করতে হবে।
মুদি ব্যবসা করার জরুরি কিছু মূলনীতি নিচে দেওয়া হল।
- পূর্ব পরিকল্পনা করা
- মুলধন
- স্থান নির্বাচন করা
- লাইসেন্স করা
- মুদি ব্যবসার প্রকারভেদ
- সঠিক পণ্য নির্বাচন করা
- সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা
- কয়েকটি মুদি পণের তালিকা
- ডেকরেশন করা
- মার্কেটিং করা
- কাস্টমারদের সাথে সদাচরণ করা
এতক্ষণ সংক্ষিপ্ত আলোচনা করলাম । এখন মুদি ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ।
১, পূর্ব পরিকল্পনা
যে কোন ব্যবসা শুরু করার আগে ঐ ব্যবসার জন্য আগেই একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করা। পূর্ব পরিকল্পনা ব্যবসায় সফলতা বা লাভবান হওয়ার জন্য খুব সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
মুদি ব্যবসার পূর্ব পরিকল্পনার ভিতরে আপনার লক্ষ্য, বাজার বিশ্লেষণ করা, মার্কেটিং করা, পণ্য নির্বাচন করা।
এবং অর্থনৈতিক এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা বা পরিকল্পনা করা। মোটকথা ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে প্রথমে পরিপূর্ণ মুদি ব্যবসার ছক আকাতে হবে। এবং সেই ছক অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করতে হবে।
২, মুলধন
ব্যবসার শুরু করতে অনেকে মুলধন নিয়ে বিপাকে পড়ে। আসলে ব্যবসার ক্ষেত্রে মুলধনটা অঞেক গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, ভয়ের কিছু নেই। আপনি যদি মুদি দোকানে ব্যবসার করতে চান, তাহলে আপনাকে মুলধন নিয়ে বেশি ভাবা লাগবে না।
যেমন ধরুন, আপনি যদি গ্রামে মুদি ব্যবসা শুরু করতে চান, তাহলে আপনি ৫০-৭০ হাজার টাঅআর মধ্যে শুরু করতে পারেন।
এতে কোন সমস্যা হবে না। আর যদি শহরে মুদি ব্যবসা করতে চান, তাহলে আপনি ২-৩ লক্ষ টাকার মাধ্যমে শুরু করতে পারেন।
শহরে টাকার পরিমাণ একটু বেশি কেননা দোকান ভাড়া এবং এডভ্যান্স এ অনেক টাকা চলে যায়।
৩, স্থান নির্বাচন করা
যে কোন ব্যবসা করতে হলে স্থান নির্বাচন করা খুব জরুরি। ব্যবসার লাভ ক্ষতি নির্ভর করে আপনার ব্যবসার স্থানের উপর।
যেমন ধরুন, আপনি যদি মুদি ব্যবসা করতে চান, তাহলে আপনাকে এমন জায়গা বেছে নিতে হবে, যার আশেপাশে মানুষের বসবাস খুব বেশি।
কারণ, মানুষের আনাগোনা বা চলাফেরা যত বেশি হবে, আপনার মুদি মালামাল তত বেশি বেচাকেনা হবে।
আর যদি আপনি এমন জায়গা মুদি দোকান দেন, যেখানে মানুষের বসবাস বা আনাগোনা কম তাহলে আপনার মুদি মালামাল বেচাকেনা খুব কম হবে।
সুতরাং মুদি ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে স্থান বা জায়গা নির্বাচন করখর বিষয়টি খুব ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
৪, লাইসেন্স করা
ব্যবসার ক্ষেত্রে খুব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের কর্তৃপক্ষ আইনের ব্যাপারে খুব স্টং।
সুতরাং আপনাকে ব্যবসা শুরু করার আগে সরকারি লাইসেন্স করে নিতে হবে। যাতে পরবর্তীতে আপনাকে আবার কোন সমস্যায় পড়তে না হয়।
এক্ষেত্রে আপনি মুদি দোকানের ব্যবসায়িক লাইসেন্স করার জন্য সিটি কর্পোরেশন অথবা ইউনিয়ন পরিষদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
৫, মুদি ব্যবসার প্রকারভেদ
বর্তমান বাজার অনুযায়ী আপনি মুদি ব্যবসা দুই ভাবে করতে পারেন।
- (ক) মুদি মালামালের ডিলারশিপ ব্যবসা
- (খ) মুদি মালামালের খুচরা ব্যবসা
(ক) মুদি মালামালের ডিলারশিপ ব্যবসা:
ডিলারশিপ ব্যবসা বলতে বুঝায়, যে আপনি মুদি মালামালগুলো পাইকারি দরে বিভিন্ন উৎপাদনকারী কারখানা থেকে ক্রয় করে বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট পৌঁছিয়ে দিবেন।
যদিও ডিলারশিপ ব্যবসায় অনেক মুলধনের প্রয়োজন। তারপর ও ডিলারশিপ ব্যবসায় লাভ অনেক বেশি হয়ে থাকে।
(খ) মুদি মালামালের খুচরা ব্যবসা:
বর্তমান বাজারে মুদি মালামালের খুচরা ব্যবসার চাহিদা অনেক বেশি। কারণ, মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর অধিকাংশ হলো মুদি মালামাল।
আর খুচরা মুদি মালামাল ব্যবসা সারা বছর জুড়ে চাহিদা থাকে। এবং খুচরা মুদি মালামালের ব্যবসাটাও অনেক লাভজনক ব্যবসা।
এক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন ডিলারশিপ ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করে পাইকারি দরে মুদি মালামাল ক্রয় করতে হবে। তারপর দোকান থেকে আপনি মুদি মালামালগুলো খুচরা বিক্রি করবেন।
৬, সঠিক পণ্য নির্বাচন করা
ব্যবসার ক্ষেত্রে পণ্য নির্বাচনের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হয়। কেননা, আপনি এই পণ্য বিক্রি করার মাধ্যমে ব্যবসায় লাভবান হবেন।
আর মুদি মালামাল ক্রয়ের ব্যাপারেও খুব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ, বর্তমান সময়ে ভালো ব্রান্ডের নামে অনেক বাজে মালামাল বিক্রি করে থাকে।
এবং মুদি পণ্যের মেয়াদের বিষয়টি খুব খেয়াল করা। কেননা মেয়াদ উত্তীর্ণ মালামাল বিক্রি করা দন্ডনীয় অপরাধ। এজন্য মুদি পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে সঠিক পণ্য ক্রয় করা।
আর আপনার দোকানের আশেপাশের মানুষ যারা আপনার রেগুলার কাস্টমার তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য নির্বাচন করতে হবে। তাহলে আপনি ব্যবসায় দ্রুত লাভবান হতে পারবেন।
আরো পড়ুন : ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ইসলামিক বিজনেস নাম ও সুন্দর নামের তালিকা
৭, সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা
যে কোন ব্যবসার ক্ষেত্রে মূল্য নির্বাচন করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনাকে মুদি মালামাল বিক্রি করতে হলে আপনাকে সঠিক মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
এক্ষেত্রে আপনি আশেপাশের বাজার অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন। এমন যেন না হয় , যে আপনার আশেপাশের দোকানগুলো থেকে আপনার দোকানের মূল্য বেশি।
বরং সমতা বজায় রাখতে হবে। আপনার দোকানের পণ্য এবং মূল্য যদি যথাযথ থাকে তাহলে আপনার কাস্টমার বাড়বে। আর তখনই আপনার ব্যবসা সফলতার দিকে এগিয়ে যাবে।
৮, মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা
পণ্য গুলো ভালো ভালো কোম্পানির থেকে নেওয়ার করার চেষ্টা করবেন। যেমন : বসুন্ধরা গ্রুপ ,কিসোয়ান গ্রুপ , স্কয়ার ,পুস্টি গ্রুপ ইত্যাদি।
রান্নার জন্য যে সমস্ত পণ্য সংগ্রহ করতে পারেন ।
- চাল
- তেল
- চিনি
- সেমাই
- সুজি
- নুডুলস
- মসলা
- রেডি মিক্স
- লবণ
- চা
- কফি
- আটা
- ময়দা
- চিড়া
- পেঁয়াজ
- আদা
- রসুন
- হলুদ
- তেজপাতা
- জিরা
- দুধ
- এলাচি ইত্যাদি ।
পানিয় যে সমস্ত পণ্য সংগ্রহ করতে পারেন ।
- কোল্ড ড্রিংকস
- জুস
- আইসক্রিম
- মিনারেল ওয়াটার ইত্যাদি।
বেকারির যে সমস্ত পণ্য সংগ্রহ করতে পারেন ।
- চানাচুর
- কেক
- বিস্কুট
- জেলিবেকারি
- খাবার বিস্কুট
- পাউরুটি
- বন রুটি ইত্যাদি
সৌন্দর্য এর জন্য যে পণ্যগুলো সংগ্রহ করতে পারেন।
- শ্যাম্পু
- সাবান
- টুথপেস্ট
- নারিকেল তেল
- টিস্যু
- লোশন
- স্যাভলন
- মাউথ ওয়াশ
- নারিকেল তেল ইত্যাদি।
আরো নানা রকমের পণ্য
- চুইংগাম
- আচার
- গোলাপ জল
- ডিটারজেন্ট
- পাউডারজ্যাম
- পাউডার
- ফেসিয়াল টিস্যু
- টয়লেট টিস্যু
- খাবার স্যালাইন
- ব্যাটারি
- সুঁই
- ব্লেড
- আইকা
- গাম
- গ্লুটেস্টি
- হজমিদা রচিনি
- চিপস
- চকলেট
- হরলিক্স
ইত্যাদি এইপণ্য গুলো সংগ্রহ করতে পারেন আপনার মুদি ব্যবসার জন্য ।
৯, ডেকরেশন করা
মানুষ সাধারণত সৌন্দর্যের প্রতি দূর্বল। সুতরাং আপনাকে দৃষ্টি নন্দণীয় ফার্ণিচার করতে হবে। এবং এমনভাবে ফার্ণিচার সাজাতে হবে, যাতে আপনার দোকানের সব মুদি মালামালগুলো কাস্টমারদের সামনে প্রথম দেখাতেই চোখে পড়ে যায়।
সুতরাং আপনার দোকানের ডেকরেশন করার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আপনাকে দোকানের ডেকরেশন সাজাতে হবে।
৯, মার্কেটিং করা
আপনার ব্যবসা সবার কাজে জনপ্রিয় করতে হলে আপনাকে মার্কেটিং করতে হবে। বর্তমান সময়ে মানুষের সব কিছুই অনলাইন ভিত্তিক গড়ে উঠেছে।
এজন্য আপনিও আপনার দোকানের মার্কেটিং অনলাইনে করতে পারেন। এবং কিছু কাগজ ছাপিয়ে লাগাতে পারেন।
সবচেয়ে বড় কথা আপধার দোকানের মুদি মালামালগুলো এবং মূল্য সঠিক থাকে, তাহলে আপনার মার্কেটিং এমনিতেই হয়ে যাবে।
১০, কাস্টমারদের সাথে সদাচরণ করা
কাস্টমারদের সাথে খারাপ আচরণ করা কোন ব্যবসায়ীর জন্য মানায় না। বরং প্রত্যেকটা কাস্টমারদের সাথে এমন আচরন করা ,যাতে সবার সাথে একটা সু -সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
কাস্টমারদের সাথে সম্পর্ক ভালো হলে তারা কোন মুদি মালামাল ক্রয়ের জন্য অন্য দোকানে না গিয়ে আপনার দোকানে আসবে।
সুতরাং কাস্টমারদের সাথে সব সময় সদাচরণ করা আবশ্যক। বেচাকেনার সময় দরদাম নিয়ে কথাকাটাকাটি হলে আপনাকে নমনীয়তা অবলম্বন করে তাদের কে ভালোভাবে বুঝাতে হবে।
উপসংহার
উপরে মুদি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে আলোচনা করলাম । মুদি ব্যবসা খুব লাভজনক একটা ব্যবসা।
সুতরাং আপনি যদি উপরোক্ত কথাগুলো মাথায় রেখে মুদি ব্যবসা শুরু করেন। তাহলে আপনি লাভবান হতে পারবেন।
আশাকরি আপনি অনেক উপকার পেয়েছেন । লেখা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।