আপনি কি ফার্নিচার ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে এ আর্টিকেলটা আপনার জন্য।
আধুনিকতার এই যুগে ফার্ণিচার জিনিসপত্রের প্রতি মানুষের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমান সময়ে নতুন নতুন আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে।
এজন্য নতুন নতুন বাড়ি ও ফ্ল্যাটের জন্য ফার্ণিচারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের আকর্ষণ খুব বেশি।
এজন্য ঘর-বাড়ি সাজাতে এখন সবাই ফার্ণিচারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তাছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত, স্কুল , কলেজ, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, এবং হাসপাতাল ইত্যাদির জন্য এখন ফার্ণিচারের খুব বেশি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
আর মাঝারি পুঁজির মধ্যে বর্তমান সময়ে ফার্ণিচার ব্যবসা করা অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা হবে। কারণ, বর্তমান বাজারে ফার্ণিচারের গ্রাহক খুব বেশি। সবাই নিজেদের বাড়ি বা ফ্ল্যাট সাজাতে চাই নিজের মনের মতো ফার্ণিচার দিয়ে।
আমরা আমাদের এই আর্টিকেলে আপনাকে ফার্নিচার ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করছি। সুতরাং আপনাকে ফার্ণিচার ব্যবসার আইডিয়া নিতে হলে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
ফার্নিচার ব্যবসার আইডিয়া ২০২৪
ফার্নিচার ব্যবসা করে সফলতা অর্জনের জন্য আমি আপনাকে কিছু গাইডলাইন দিবো। সুতরাং ব্যবসায় লাভবান হওয়ার জন্য এই গাইডলাইনগুলো অনুসরণ করতে হবে।
ফার্নিচার ব্যবসার জন্য যে সব বিষয়ে জানা প্রয়োজন।
- ফার্ণিচার ব্যবসার বিভিন্ন ধরণ
- পূর্ব পরিকল্পনা
- মুলধন
- লাইসেন্স করা
- স্থান নির্বাচন
- মানসম্মত ফার্ণিচার রাখা
- সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা
- কাস্টমারদের সাথে সদ্ব্যবহার করা
এতক্ষণ সংক্ষিপ্ত আলোচনা করলাম । এখন ফার্নিচার ব্যবসার আইডিয়া বিস্তারিত আলোচনা করব ।
১, পূর্ব পরিকল্পনা
যে কোন সফলতায় পৌঁছাতে হলে পূর্ব পরিকল্পনা জরুরি। অনেকে পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই ব্যবসা শুরু করে পরবর্তীতে বিপাকে পড়ে যায়।
সুতরাং আপনাকে ফার্ণিচার ব্যবসা করতে হলে পূর্ব পরিকল্পনা করতে হবে। সেখানে আপনি ঠিক করবেন আপনার লক্ষবস্তু অর্থাৎ আপনি কোন ধরনের ফার্ণিচার বিক্রি করবেন,
আপনার কাস্টমার কেমন হবে, এবং আপনার এলাকায় ফার্ণিচার জিনিসপত্রের চাহিদা কেমন। এক্ষেত্রে আপনি অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।
২, মুলধন
সাধারণত ফার্ণিচার ব্যবসায় একটু বেশি মুলধনের প্রয়োজন হয়। তবে ফার্ণিচার ব্যবসায় লাভের পরিমাণটাও অনেক বেশি হয়ে থাকে।
বর্তমান বাজারে একটি ফার্ণিচারের দোকান দিতে গেলে ৫-৭ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হবে। কেননা ইপনাকে ফার্ণিচার তৈরির সরঞ্জাম, একটি গাড়ি এবং কিছু কর্মীর প্রয়োজন।
তবে যদি আপনার কাছে এত টাকা ক্যাশ না থাকে , তাহলে আপনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিজনেস লোন উঠাতে পারবেন।
সেজন্য আপনাকে সিটি কর্পোরেশন অথবা ইউনিয়ন পরিষদের সাথে যোগাযোগ করলে হয়ে যাবে কিছু কাগজপত্রের শর্ত সাপেক্ষে।
৩, লাইসেন্স করা
যে কোন ব্যবসা শুরু করার আগে লাইসেন্স করে রাখা ভালো। কেননা অনেক সময় সরকারিভাবে ব্যবসার লাইসেন্স চেক করা হয়।
এজন্য আগে থেকেই আপনার ব্যবসার লাইসেন্স করা থাকলে পরর্বতীতে কোন সমস্যায় পড়তে হবে না।
৪, স্থান নির্বাচন
যে কোন ব্যবসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো স্থান নির্বাচন করা। আপনার ব্যবসা জনপ্রিয়তায় পৌঁছাতে হলে আপনার দোকানটা সুন্দর একটা স্থানে করা জরুরি।
এমন জায়গায় করা যেখানে সব সময় মানুষের আনাগোনা থাকে। এবং ফার্ণিচারের দোকানটা একটু উন্নত এলাকায় করা ।
যার আশেপাশে মানুষের চাহিদা থাকে ফার্ণিচার জিনিসপত্রের প্রতি। বেশি বিক্রয় করতে হলে আপনাকে উপযুক্ত স্থানে ফার্ণিচারের দোকান দিতে হবে। প্রয়োজনে মানুষের সাথে পরামর্শ করে তারপর উপযুক্ত স্থানে দোকান দিবেন।
৫, ফার্ণিচার ব্যবসার বিভিন্ন ধরণ
বর্তমান বাজারে ফার্ণিচার মালামালের খুব চাহিদা রয়েছে। এবং এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। আর ফার্ণিচারের এই ব্যবসা বিভিন্ন ভাবে করা যেতে পারে।
আমরা নিচে বিভিন্ন ধরনের ফার্ণিচার ব্যবসার আইডিয়া বিস্তারিত ভাবে আলোচনার মাধ্যমে আপনাকে সাহায্য করছি।
- (ক) ফার্ণিচার কারখানা
- (খ) ফার্ণিচার ডিলারশিপ
- (গ) ফার্ণিচার দোকান
- (ঘ) ফার্ণিচার অনলাইন বিক্রি
(ক) ফার্ণিচার কারখানা
প্রথমত ফার্ণিচার কারখানা ব্যবসাটা একটি ব্যয় বহুল পুঁজির ব্যবসা। কিন্তু ফার্ণিচার কারখানার ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা।
এই ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে প্রথমে একটি কারখানা করতে হবে। তারপর ফার্ণিচার কারখানার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, মেশিন ইত্যাদি ক্রয় করতে হবে।
আর এই ব্যবসায় আপনার জন্য লক্ষনীয় বিষয় হলো দুই টি।
- ১, দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেয়া
- ২, সৃজনশীল কাজ করা
১, দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেয়া:
ফার্ণিচার তৈরি করার জন্য আপনাকে যাচাই বাচাই করে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। কেননা মানুষ সব সময় ভালো কিছু চায়।
বিশেষ করে ফার্ণিচার জিনিসপত্রের জন্য ফিনিশিং দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাস্টমাররা এসে প্রথমেই দেখবে ফার্ণিচারটির ফিনিশিং কেমন হয়েছে।
আর একজন দক্ষ কর্মী পারে কোন কাজকে নিপুণতার সাথে ফিনিশিং দিতে। সুতরাং প্রয়োজনে বেতন একটু বেশি দিয়ে হলেও আপনাকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিতে হবে।
২, সৃজনশীল কাজ করা:
মানুষ সব সময় নতুন কিছু অনুসন্ধান করে। বাজরে নিউ মডেলের কোঞ ফার্ণিচার আসলে বেশ কিছু দিন তার চাহিদা থাকে।
সুতরাং সব সময় চেষ্টা করা নতুন কিছু তৈরি করার। এজন্য নিজের ভিতরের সৃজনশীল শক্তি কে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন ডিজাইন আবিষ্কার করা ।
আরো পড়ুন : উদ্যোক্তা বিজনেস আইডিয়া : একেবারে কম খরচে শুরু করতে পারেন এই ব্যবসাগুলো ।
(খ) ফার্ণিচার ডিলারশিপ
ফার্ণিচার ডিলারশিপ ব্যবসা খুব লাভজনক। ফার্ণিচার তৈরি করা খুব ব্যয় বহুল হওয়ার কারণে সবাই ফার্ণিচার কারখানা দিতে পারে না। এজন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা ডিলারশিপ ব্যবসায়ীদের থেকে ক্রয় করে।
ডিলারশিপ ব্যবসা হলো – আপনি বড় বড় ফার্ণিচার কারখানা থেকে পাইকারি দরে ফার্ণিচার জিনিসপত্র ক্রয় করে বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছিয়ে দিবেন। এ ব্যবসা করতে হলে আপনার একটি গাড়ি ও কিছু কর্মোঠ কর্মী প্রয়োজন।
(গ) ফার্ণিচার দোকান
সৌন্দর্যের জগতে মানুষ আপন বাড়ি ফ্ল্যাট , হোটেল রেস্টুরেন্ট, দোকান-পাট সাজাতে খুচরা ফার্ণিচার দোকানের প্রতি আগ্রহী হয়।
ফার্ণিচার জিনিসপত্রের দোকান দিতে হলে আপনাকে ফার্ণিচার ডিলারশিপ ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
এবং তাদের থেকে খুচরা দরে ফার্ণিচার জিনিসপত্র ক্রয় করে দোকানে সাজাতে হবে। সাধারণত মানুষ ঘর বাড়ি সাজানো জন্য ২-৩ টি ফার্ণিচার ক্রয়ের জন্য কারখানায় যায় না।
বরং খুচরা ব্যবসায়ীদের থেকে ক্রয় করে থাকে। আথ বর্তমান বাজারে ফার্ণিচার দোকানের ব্যবসা অনেক লাভজনক একটা ব্যবসা।
(ঘ) ফার্ণিচার অনলাইন বিক্রি:
বর্তমান সময়ে মানুষের সব কিছুই অনলাইন ভিত্তিক গড়ে উঠেছে। আর ব্যবসার ক্ষেত্রে অনলাইন একটা বড় প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে।
এখন সব ধরনের ক্রয় বিক্রয় অনলাইনে হয়ে থাকে। আর বর্তমান মানুষের কোন কিছু কেনাকাটার জন্য সর্ব প্রথম অনলাইনে খোঁজে।
সুতরাং আপনি ফার্ণিচারের ব্যবসা অনলাইনে করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে একটি ওয়েবসাইট অথবা ফেসবুকে একটি পেইজ খুলতে হবে।
এবং ফার্ণিচার জিনিসপত্রের সুন্দর সুন্দর ছবি উঠিয়ে একটি আকর্ষণীয় ক্যাপশন দিয়ে আপলোড দিতে হবে।
অনলাইনে ফার্ণিচার ব্যবসা করতে হলে আপনাকে সব সময় অনলাইনে এক্টিভ থাকতে হবে। এই অনলাইন ব্যবসায় তুলনামূলক খরচ ও কম।
৬, মানসম্মত ফার্ণিচার রাখা
ব্যবসায় লাভবান হওয়ার ক্ষেত্রে কাস্টমারদের চাহিদা বুঝা খুব প্রয়োজন। কাস্টারদের চাহিদা অনুযায়ী দোকানে ফার্ণিচার রাখতে হবে।
এবং ফার্ণিচার অবশ্যই মানসম্মত হতে হবে। এবং ফার্ণিচার জিনিসপত্রের গুলো দোকানে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হবে।
এবং দোকানের সবচেয়ে বেস্ট ফার্ণিচার গুলো দোকানের সামনে রাখবেন। যাতে কাস্টমাররা প্রথমে দেখেই আপনার দোকানে আসে। এজন্য দোকানের মালামাল গুলো গুনগত দিক দিয়ে ভালো মানের হওয়া চাই।
৭, সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা
ফার্ণিচার পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা চাই। বাজারে অন্যান্য দোকান অনুযায়ী আপনার দোকানের মূল্য নির্ধারণ করবেন। আপনার দোকানের মূল্য বেশি হলে আপনার কাস্টমার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
৮, কাস্টমারদের সাথে সদ্ব্যবহার করা
কোন পণ্য বেচাকেনার সময় সাধারনত কাস্টমাররা বিক্রেতার সাথে কথা কাটাকাটি হয়ে থাকে। তখন আপনাকে নমনীয়তা অবলম্বন করতে হবে।
এবং সুন্দর আচারণের মাধ্যমে কাস্টমারকে পণ্যের গুণাগুণ বর্ণনা করে বুঝিয়ে বলা। কাস্টমারদের সাথে খারাপ আচরণ করলে ব্যবসা দীর্ঘ মেয়াদি হয় না। এজন্য সব সময় কাস্টমারদের সাথে সদাচরণ করা উচিত।
উপসংহার
উপরে ফার্নিচার ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে আলোচনা করলাম । ফার্নিচার ব্যবসা খুব লাভজনক একটা ব্যবসা।
সুতরাং আপনি যদি উপরোক্ত কথাগুলো মাথায় রেখে ফার্নিচার ব্যবসা শুরু করেন। তাহলে আপনি লাভবান হতে পারবেন।
আশাকরি আপনি অনেক উপকার পেয়েছেন । লেখা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।
FAQ
কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার উপায়
কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার উপায় হলো : শুকনো এবং পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করবেন। এতে করে কাঠের সৌন্দর্য ফিরে আসবে।
এই কাজটি কিছুদিন পর পরই করবেন। এতে কাঠের সৌন্দর্য বহাল থাকবে। তবে কোন সময় ভেজা কাপড় দিয়ে কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করতে যাবেন না। এতে করে কাঠের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার কি দামি ?
সেগুন কাঠের ফার্নিচার দেখতে সুন্দর ও অনেক আকর্ষণীয়। অতএব সেগুন কাঠের ফার্নিচার অনেক দামি।