আপনি কি জানতে চান প্যাকেজিং ব্যবসা সম্পর্কে ? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
এটা নতুন কোনো ব্যবসা নয়। প্রত্যেকটি ব্যবসায় বিশেষ করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে সফলতার চাবিকাঠি হলো উন্নত মানের প্যাকেজিং করা।
অনেকেই আছে তারা প্যাকেজিং এর দিকে ঠিকমতো লক্ষ্য রাখে না। যার ফলে পণ্য বেশি বিক্রি হয় না।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে প্রায় 60% গ্রাহকরা বা ক্রেতারা পণ্যের আকর্ষণীয় প্যাকেজিং দেখে পণ্য ক্রয় করে।
তাই যদি পণ্যের প্যাকেজিং আকর্ষণীয় হয় তাহলে প্রায় 10 থেকে 20 শতাংশ বিক্রয় বেড়ে যায়।
বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বা কোন ই-কমার্স সাইটে যারা কেনাকাটা করেন নিয়মিতভাবে তারা অধিকাংশই প্যাকেজিং এর মাধ্যমে বেশি আগ্রহ বোধ করে পণ্য ক্রয় করেন ।
অতএব এ ব্যবসায় অনেক চাহিদাও রয়েছে। আপনি যদি সঠিক নিয়মে এ ব্যবসা করতে পারেন তাহলে খুব দ্রুত সফলতা অর্জন করতে পারবেন। আজ আমি প্যাকেজিং ব্যবসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
প্যাকেজিং ব্যবসা কি বা কাকে বলে ?
একটি পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর জন্য পণের উপরে অথবা পণ্যকে বহন করার জন্য যে মাধ্যম গ্রহণ করা হয় অর্থাৎ আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করার জন্য যে প্যাকেট ব্যবহার করা হয় তাকেই প্যাকেজিং বলে।
যেমন : মিষ্টির বাক্স, শাড়ির বাক্স, বিরানির বাক্স, জুতার বাক্স, কলমের বাক্স, ডাইরির বাক্স ইত্যাদি।
আর এই প্যাকেজ তৈরি করে বিক্রি করাই হলো ব্যবসা । এই ব্যবসায় অনেক চাহিদা রয়েছে।
প্যাকেজিং এর গুরুত্ব
বর্তমান সময়ে একটি পণ্যের কোয়ালিটি তখনই ভালো হয় যখন তার প্যাকেজিং ভালো হয়। আর যখন কোন পণ্যের প্যাকেজিং ভালো হয় না তখন সে পণ্যের মান কমে যায় যদিও পণ্যটা অনেক ভাল হয়।
অতএব আপনি যদি আপনার ব্যবসাকে সফল করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার পন্যের প্যাকেজিং এর মান হাই কোয়ালিটি করতে হবে।
তাহলে দ্রুত আপনার ব্যবসায় সফলতা আসবে। কেননা আপনার পন্যের প্যাকেজিং যখন হাই কোয়ালিটি হবে তখন অটোমেটিকভাবে আপনার পণ্যটাকে হাই কোয়ালিটি করে ফেলবে।
আর গ্রাহক এরকম পণ্যকে বেশি খোঁজে। এসব বিষয় দ্বারা এটাই বুঝা গেল প্যাকেজিং এর গুরুত্ব। যখন প্রমাণ হলো প্যাকেজিং এর গুরুত্ব অনেক অতএব এ ব্যবসার গুরুত্ব ও অনেক।
এই ব্যবসার অনেক চাহিদা রয়েছে। আপনি চাইলে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করতে পারবেন।
প্যাকেজিং এর ব্যবসার বাজার সম্ভাবনা
শহর হোক অথবা গ্রাম হোক সব জায়গাতেই মিষ্টি, শাড়ি ,জুতার প্রভৃতি দোকানে প্যাকেট এর প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে বর্তমানে অনলাইনে ব্যবসার চাহিদা বৃদ্ধি হওয়ায় আগের থেকে প্যাকেজিং এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্থাৎ জুতা, জামা থেকে শুরু করে অনলাইনে পণ্যের প্যাকেজিং করতে হয়। তাই অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে প্যাকেজিং এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দিন দিন প্যাকেজিং এর চাহিদা বাড়ছে।
সুতরাং এই ব্যবসায় চাহিদা যেমন বেশি ঠিক লাভও বেশি ।
প্যাকেজিং ব্যবসার মূলধন
আপনার ব্যবসা অনুযায়ী মূলধন লাগবে। আপনি যদি বড় আকারে এ ব্যবসা করতে চান তাহলে আপনার মূলধন বেশি লাগবে। তখন মোটামুটি কাঁচামালের ও যন্ত্রপাতিতে 50 হাজার টাকার মত লাগবে।
আর যদি ছোট আকারে এ ব্যবসা করতে চান তাহলে আনুমানিক 3000 থেকে 4000 টাকার মত লাগবে।
প্যাকেজিং ব্যবসার প্রশিক্ষণ
হয়তোবা আপনি একজন প্যাকেজিং বিষয়ে অভিজ্ঞ লোক রাখবেন।
অথবা আপনি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
সেখানে আপনি নিজে কোর্স করে তারপরে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
প্যাকেজিং ব্যবসায় সফল হওয়ার কয়েকটি শর্ত
আপনি যদি সফল হতে চান এবং দীর্ঘ দিন এ ব্যবসায় টিকে থাকতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে কয়েকটি শর্ত মানতে হবে।
- আকর্ষণীয় নকশা বা ডিজাইন তৈরি করতে হবে। যাতে করে গ্রাহক দেখেই পছন্দ করে ফেলে।
- ভালো মানের রং ও কাগজ এবং কাঁচামাল ব্যবহার করতে হবে। যাতে করে প্যাকেটটাকে মানের দিক দিয়ে হাই কোয়ালিটি করে তোলে।
- গ্রাহকদের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। অর্থাৎ গ্রাহকরা কোন ধরনের ডিজাইন পছন্দ করে বা কোন ধরনের কালার পছন্দ করে এগুলো লক্ষ্য রেখে প্যাকেট তৈরি করতে হবে। এগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে প্যাকেট তৈরি করলে গ্রাহকরা আকর্ষিত হয়ে ক্রয় করবে।
- আপনার প্রতিযোগীদের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। অর্থাৎ তারা কি ধরনের প্যাকেট বানাচ্ছে বা কি কোয়ালিটি দিচ্ছে তাদের প্রতি লক্ষ্য রেখে আপনি আরো বেস্ট দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
- প্যাকেজিং এর উপর কোম্পানির লোগো থাকা আবশ্যক। এর মাধ্যমে কোম্পানির প্রচার প্রসার বাড়ে। এবং একটি ব্র্যান্ড তৈরি হয়।
- প্যাকেট অবশ্যই মজবুত ভাবে তৈরি করা। যাতে করে পন্যের কোনো সমস্যা না হয়।
- প্যাকেজিং এর সাথে একটি ধন্যবাদ চিঠি পাঠানো। এর ফলে ক্রেতার সাথে কোম্পানির একটা সম্পর্ক তৈরি হবে। ফলে সে দ্বিতীয়বার আবার ক্রয় করার চেষ্টা করবে।
প্যাকেজিং ব্যবসার আয়
আপনার ব্যবসার পরিধি অনুযায়ী আয় হবে। আপনার ব্যবসা যদি অনেক বড় হয় তাহলে আয় বেশি হবে। আর যদি ছোট হয় তাহলে আয় কম হবে।
কমের ক্ষেত্রে যেমন : ধরুন আপনার 2000 জুতার প্যাকেট তৈরি করতে খরচ হয় 10000 টাকা আর এগুলোকে বিক্রি করেন 12000 টাকা। তাহলে এখান থেকে আপনার লাভ হলো 2000 টাকা। এভাবেই আপনার লাভ হবে।
প্যাকেজিং মেশিন ও কাঁচামাল সম্পর্কে আইডিয়া
যন্ত্রপাতির লিস্ট
- কাটিং মেশিন
- কাগজ
- কড়াই
- ক্রিজ মেশিন
- ব্রাশ
- চুলা
- গামলা
- স্কেল
- খুন্তি
- চৌকি
কাঁচামালের লিস্ট
- ময়দা
- তেল বা গ্যাস
- রঙ্গিন কাগজ
- শক্ত মোটা কাগজ
- আঠা
প্যাকেজিং এর ব্যবসা কারা করতে পারে ?
এ ব্যবসার কোন নিয়ম নেই অর্থাৎ ছোট থেকে বড় সবাই এব্যবসা করতে পারেন। কারণ এই ব্যবসার কাজ গুলো অনেক সহজ। তবে হাই কোয়ালিটি প্যাকেট তৈরি করার জন্য অবশ্যই সূক্ষ্মতার সাথে কাজ করতে হবে।
বর্তমানে প্রতিযোগিতার সময়। তাই অবশ্যই হাই কোয়ালিটি প্যাকেট তৈরি করতে হবে
এবং সূক্ষ্মতার সাথে তৈরি করতে হবে। যাতে করে গ্রাহকরা দেখামাত্রই পছন্দ করে ফেলে।
প্যাকেট তৈরির নিয়ম
মিষ্টির প্যাকেট তৈরি করার নিয়ম
মিষ্টির প্যাকেট দুই ধরনের হয়। কিছু মিষ্টির প্যাকেট মোটা হয়। আবার কিছু মিষ্টির প্যাকেট পাতলা হয়।
এই হিসাবে যদি আপনি মোটা মিষ্টির প্যাকেট তৈরি করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে কয়েকটি কাজ করতে হবে।
- সর্বপ্রথম আপনাকে মোটা কাগজ দিয়ে একটি বাক্স তৈরি করতে হবে।
- তারপর কাটতে হবে ।
- এরপর ভাজ করতে হবে ।
- তারপর কাটা অংশ গুলো আঠা দিয়ে জোড়া লাগাতে হবে।
- তারপর বিভিন্ন রকম ডিজাইন করা কাগজ অথবা ছাপানো কাগজ ঐ মিষ্টির বাক্সের উপর লাগিয়ে দিবেন। যাতে করে সুন্দর দেখা যায়।
এভাবেই মিষ্টির বাক্স তৈরি হবে। আর যদি পাতলা কাগজ দিয়ে মিষ্টির প্যাকেট তৈরি করতে চান তাহলে ঠিক এই নিয়মেই তৈরী করতে হবে।
জুতার প্যাকেট তৈরি করার নিয়ম
- সর্বপ্রথম মোটা কাগজের মধ্যে কোম্পানির নাম বা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয় ছাপাতে হবে।
- তারপর জুতার সাইজ অনুযায়ী এই কাগজগুলো কাটতে হবে। অর্থাৎ ছোটদের জুতা হলে সে অনুযায়ী কাটতে হবে আর যদি বড়দের হয় সে অনুযায়ী কাটতে হবে।
- এরপর ভাজ করতে হবে
- তারপর কাটা অংশ গুলো জোড়া লাগাতে হবে
আর যদি কোন ডিজাইন ছাড়া স্বাভাবিক কোন মোটা কাগজ দিয়ে তৈরি করেন
তাহলে ওই জুতার বাক্সের উপরে ডিজাইন করা কাগজ অথবা ছাপানো কোন কাগজ লাগিয়ে দিবেন। যাতে করে দেখতে সুন্দর দেখা যায়।
পরিশেষে বলব : উপরে উল্লেখিত প্যাকেজিং ব্যবসা সম্পর্কে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে জানাবেন। ধন্যবাদ।।
আরো পড়ুন :- ২০২৫ সালে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার ১৭টি উপায়